1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima

সাইকেল চালানো আসলে কতটা স্বাস্থ্যকর

  • আপডেট : শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪

‘সাইকেল চালানোর যে সহজাত আনন্দ সেটা আর অন্য কিছুতে পাওয়া যায় না’-সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির উক্তি হিসেবে এটি ইন্টারনেটে ব্যাপক চর্চিত। তিনি সেটা সত্যিই বলে থাকুন আর নাই থাকুন, শরীর ও মন ঠিক রাখার জন্য সাইক্লিংকে মনে করা হয় সবচেয়ে সহজ একটা উপায়।

বাংলাদেশেও ছোটবেলায় সাইকেলের সাথে পরিচয় ঘটে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সময়ের সাথে সাইকেল এখন হয়ে উঠেছে শরীর ও পরিবেশ বান্ধব একটি বাহন। ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে আপনার সময়ও বাঁচিয়ে দেবে দুই চাকার সাইকেল।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের হিসাব বলছে, বিশ্বজুড়ে এখন দুই বিলিয়নের বেশি সাইকেল ব্যবহার হচ্ছে। ২০৫০ সাল পর্যন্ত যেই সংখ্যাটা ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকতে পারে।

অর্থাৎ জীবিকার তাগিদে, পরিবহন হিসেবে বা খেলাধুলার মাধ্যম হিসেবে সাইকেলের ব্যবহার দিনদিন বেড়েই চলেছে। আর এ সবকিছুরই আছে স্বাস্থ্যগত সুবিধা। সাইক্লিং শারিরীক ও মানসিক নানান স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন কমিয়ে দেয়, তেমনি শরীরের পেশিকে শক্তিশালী করার সাথে সাথে সহনশীলতাও বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ঠিক কোন বয়সে সাইকেল চালানো শুরু করা উচিত, কতটা সময় ধরে সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, সাইক্লিংয়ের ঝুঁকির দিকগুলো কী কী, এই প্রশ্নগুলোর একটু উত্তর খোঁজা যাক।

সাইকেল কখন?
শৈশবে সাইকেল কেনার জন্য পরিবারের কাছে বায়না ধরার কথা অনেকেরই নিশ্চয় মনে আছে? কিন্তু ঠিক কোন বয়সটা সাইকেল চালানো শুরুর জন্য উপযোগী, এর কোনো উত্তর সে অর্থে নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ স্কুল বলছে, যেকোনো বয়সে সাইকেল চালানো যেতে পারে। একই কথা বলা আছে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ওয়েবসাইট বেটার হেলথ চ্যানেলে যে সব বয়সী লোক সাইক্লিংয়ে যুক্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের আয়রনম্যান ও ট্রায়াথলেট মোহাম্মদ সামছুজ্জামান আরাফাত বলেন, ‘এটার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই।’

তিনি আরো যোগ করে বলেন, ‘আমার বাচ্চার বয়স এখন পাঁচ বছর, ও চার বছর থেকেই সাইকেল চালাতে পারে। আমার অভিজ্ঞতায় চার থেকে সর্বোচ্চ যত বছর পর্যন্ত সম্ভব সবাই আসলে সাইকেল চালাতে পারে।’

এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ট্রাইসাইকেল বা তিন চাকার সাইকেল দিয়ে শুরু করা যেতে পারে বলে মত তার। তবে, নানান পরিসংখ্যান বলছে, যেসব শিশু বিশেষ প্রাইমারি স্কুলে পড়ছে তাদের মধ্যে সাইকেল দুর্ঘটনার হার বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের এক হিসাব বলছে, যেসব পুরুষের বয়স ৫৫ থেকে ৬৯ বছর, তারা বাইসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাও যেতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার দিকে জোর দেয়া হয়েছে।

সব মিলে তাই বলা যায়, সর্বনিম্ন ৪ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৭০ বা ক্ষেত্র বিশেষে তার বেশি বছর বয়স পর্যন্ত মানুষ সাইকেল চালাতে পারে।

সাইকেল স্বাস্থ্যকর
বলা হয়ে থাকে, সাইক্লিং যদি একটা ওষুধ হতো, তাহলে ডাক্তাররা এটা সবাইকেই প্রেসক্রিপশনে লিখে দিতেন।

সাইক্লিংয়ের স্বাস্থ্যকর দিক নিয়ে শুধু একটা পরিসংখ্যানে চোখ বুলানো যাক, স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ও গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘যারা সাইকেল চালিয়ে কাজে যান তাদের যেকোনো রকম মৃত্যু ঝুঁকি ৪১ শতাংশ কমে যায়।’ ২০১১ সাল থেকে পরবর্তী ৫ বছর ধরে ১৬ থেকে ৭৪ বছর বয়সী সাইক্লিস্টদের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে এসে সাইক্লিস্টদের মধ্যে মানসিক অবসাদ কমেছে।

অর্থাৎ সাইক্লিং শারীরিক নানা রোগ দূরে রাখার পাশাপাশি মানসিক রোগও দূর করে।

অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ওয়েবসাইট বেটার হেলথ চ্যানেলে বলা হচ্ছে, সাইক্লিং স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কয়েক ধরনের ক্যান্সার, মানসিক অবসাদ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং আর্থাইটিসের মতো মারাত্মক সব রোগ প্রতিরোধ করে।

গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. জেসন গিল বলেন, ‘এটা এখন প্রমাণিত যেকোনো উপায়ে কাজে যায়, তার সাথে তার স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে সাইকেল চালিয়ে কাজে যাওয়ার উপকার অনস্বীকার্য।’

তিনি বলেন, সাইকেল চালালে অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয় না।

আর শারীরিক ব্যায়ামগুলোর মধ্যে সাইক্লিং হলো সবচেয়ে সস্তা, মজার এবং সহজেই দৈনন্দিন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মতো।

অন্যান্য স্পোর্টসের মতো এতে অনেক স্কিলের দরকার হয় না, বেশিভাগ মানুষই সাইকেল চালাতে জানে এবং সবচেয়ে মজার দিক হলো আপনি একবার সাইকেল চালানো শিখলে সেটা আর জীবনে ভুলবেন না।

আরাফাত বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আসলে আমাদের সাইকেলের প্রতি একটা আগ্রহ জন্মায়। দুই চাকার ওপরে ব্যালান্স করে যাওয়াটা একটা দারুণ ব্যাপার, আপনার শরীর ও মনকে সতেজ করে।’

সাইক্লিং যেভাবে শরীরের উপকার করে :
* ফুসফুসকে শক্তিশালী করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
* শরীরের বিভিন্ন পেশিকে শক্তিশালী করে ও শরীরকে সংবেদনশীল করে তোলে।
* মানসিক চাপ কমিয়ে আনে।
* হাড়কে শক্তিশালী করে।
* শরীরের চর্বি ও প্রদাহ কমায়।

এডিনবরা ও গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সাইক্লিং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ৪৬ শতাংশ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনে। এছাড়া ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও ২০ থেকে ২৮ শতাংশ কমে আসে।

যুক্তরাজ্যের সাইকেল স্পোর্টসের অভিভাবক ব্রিটিশ সাইক্লিংয়ের মতে, দ্রুত সাইকেল চালিয়ে আপনি ঘণ্টায় ৫০০ ক্যালরি শেষ করতে পারেন, যা আপনার স্বাস্থ্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখে।

কতক্ষণ সাইকেল চালাবেন?
বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও গবেষণা বলছে, যারা নিয়মিত সাইকেল চালান তারা নিজেদের ১০ বছর কম বয়সী অনুভব করেন। কিন্তু দিনে ঠিক কতটা সময় সাইকেল চালানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

বেটার হেলথ চ্যানেল বলছে, স্বাভাবিক ফিটনেসের জন্য সপ্তাহে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা সাইক্লিং হলেই চলে। এতে ইনজুরির শঙ্কা খুবই কম থাকে। নিয়মিত সাইক্লিং করা ট্রেনার আরাফাতেরও একই মত।-

আপনার সুস্থতার বা ফিটনেসের জন্য দিনে আধা-ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৩ ঘণ্টা সাইকেল চালাতে পারেন। আর একটু বেশি সময় দিতে চাইলে দিনে ১ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৬ ঘণ্টা।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনও ফিটনেস ধরে রাখতে প্রতিদিন ৩০ মিনিট সাইক্লিংয়ের পরামর্শ দিয়েছে।

সাইক্লিংয়ের ঝুঁকি যেখানে?
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর এক হাজার সাইক্লিস্ট মারা যায় অন্য গাড়ির সাথে দুর্ঘটনায়, আরো এক লাখ ৩০ হাজার রাস্তায় নানা কারণে আহত হয়।’

স্বাভাবিকভাবেই বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়ার হার বেশি। আর এর বেশিভাগই ঘটে শহর এলাকায় যেখানে অন্যান্য মোটরগাড়ির চাপ অনেক বেশি থাকে। আর দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অতিরিক্ত গতির বিষয়টি।

মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, ‘সাধারণত রাস্তায় দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে হেলমেট, গ্লাভস, সিগন্যাল লাইট থাকা জরুরি, এই সেফটিগুলো মেনে চললে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি নিজেও দুর্ঘটনার কবলে পড়েছি তবে এসব থাকার কারণে ক্ষতি কম হয়েছে।’

বেটার হেলথ চ্যানেল বলছে, সাইকেলের ইনজুরি হয়ে থাকে সাধারণত শরীরকে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে ও বসার ভঙ্গি যথাযথ না হলে।

তাদের হিসেবে, মোট ইনজুরির মাত্র ৭ শতাংশ হয়ে থাকে অন্য বাহনের সাথে। আর বেশিভাগ সময় হয় আপনি নিজে পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবেন বা রাস্তায় কিছুতে ধাক্কা খাবেন। এটিও কমিয়ে আনা যায় রাস্তায় নিয়মগুলো মেনে চললে।

এক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ হলো :
*মোড় ঘোরার সময় ইন্ডিকেশন লাইট বা হাতের সঙ্কেত দেয়া।
* রাস্তায় সিগন্যালগুলো মেনে চলা।
* উজ্জ্বল কাপড় পড়া যাতে সহজে অন্য গাড়ির নজরে পড়ে।
* সাইকেল চালানোর সময় হেডফোন পরিহার করা।
* প্রতি বছরে কমপক্ষে একবার সাইকেল সার্ভিস করিয়ে নেয়া।

এছাড়া যাদের ব্যাক পেইন আছে তাদের সোজা হয়ে বসে সাইকেল চালানোর অভ্যাস করার পরামর্শ তাদের।

এসবের সাথে মোহাম্মদ আরাফাত আরো যোগ করেন, ‘যাদের হাঁটুর বা হাতের ইনজুরি তাদের জন্য সাইক্লিং না করাটাই ভালো। আবার অ্যাজমা থাকলেও সাইক্লিং ঝুঁকিপূর্ণ।’ এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে বলেন তিনি।

আর অবশ্যই সাইক্লিস্টদের সাথে পানি রাখতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট সময় পরপর পানি পান করে শরীরের পানি শূন্যতা এড়ানো যায়।

ব্রিটেনের শীর্ষ বেসরকারি ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের ক্লেয়ার হাইড বলছেন, ‘প্রতি দিনের জীবনযাপনে যারা যত বেশি সক্রিয় থাকেন, তাদের রোগের ঝুঁকি কমে। আপনাকে প্রতিদিন জিমে যেতে হবে না, ম্যারাথন দৌড়াতে হবে না.. প্রাত্যহিক জীবনযাপনে কিছুটা সময় এমন পরিশ্রম করুন যা আপনার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের গতি বাড়িয়ে দেয়।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme