1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima
শিরোনাম :
গণহত্যাকারীদের বিচার আগামী বিজয় দিবসের আগেই: আইন উপদেষ্টা সিরিয়ায় ‘চোরাগোপ্তা’ হামলায় ১৪ পুলিশ নিহত ৪২ ঘণ্টা পর রাঙামাটির নদীতে মিলল নিখোঁজ ২ পর্যটকের লাশ নাশকতা কি না, তদন্তের পর বলা যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাহাড়ে ত্রিপুরা পাড়ায় পুড়েছে ১৭ ঘর, বাসিন্দারা ছিলেন বড়দিনের উৎসবে গণপিটুনি দিয়ে চুন-বালু মেশানো এসিড পানি খাওয়ানো হয় যুবককে, পরে মৃত্যু ছাত্রদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আল্লাহর ওয়াস্তে দুর্নীতি-চাঁদাবাজি থেকে সরে আসুন: আসিফ মাহমুদ যাদুকাটায় পাথর-বালু উত্তোলন, ১৭ শেইভ মেশিন জব্দ জাহাজে ৭ খুন: একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে দিশেহারা সালাউদ্দিন-আমিনুলের পরিবার

জীবন চলে অন্যের সহায়তায়

  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজ ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী

শতবর্ষ থেকে আর মাত্র পাঁচ বছর দূরে! সৃষ্টিশীল মানবজীবনের জন্য এ এক অনন্য মাইলফলক। গ্রন্থ রচনায় অবশ্য শতক ছুঁয়েছেন কয়েক বছর আগেই। সংখ্যায় কেবল নয়, বিষয়বৈচিত্র্য ও গুণগত বিচারেও শতাধিক গ্রন্থের প্রণেতা আহমদ রফিক বাংলা সাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখক-গবেষক। সাধারণের কাছে তিনি কেবল ভাষাসংগ্রামী হিসেবে পরিচিত হলেও বিদ্বৎসমাজে তাঁর অধিক পরিচিতি কবি, রবীন্দ্রগবেষক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবে।

গত তিন বছরে বয়সের ভারে ন্যূব্জ হয়ে পড়েছেন আহমদ রফিক। স্মৃতির প্রাখর্য থাকলেও দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণতায় হারিয়েছেন লেখার সামর্থ্য। ফলে উপার্জনের পথ হয়েছে রুদ্ধ। স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন দেড় যুগ আগে। কোনো সন্তান নেই বলে তেমন কোনো স্বজনও নেই পাশে। তাই সৃজনশীলতায় সক্রিয় মানুষটি হয়ে পড়েছেন নিঃসঙ্গ ও অসহায়। মাঝেমধ্যে খেদ ঝরে পড়ে তাঁর কথায়, ‘এমন জীবন কি চেয়েছিলাম?’ তাঁর জীবন চলে দুই গৃহকর্মীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতায়। তাঁর আর্থিক ও চিকিৎসাসংক্রান্ত নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও তেমন ফল হয়নি কোনো। কারণ, তিনি পূর্বতন সরকারের স্তাবকতা তো করেনইনি, বরং তাদের জন-অহিতকর কাজের সমালোচনায় তিনি কলম ধরেছেন নিয়মিত। হয়তো এ কারণেই বহুমাত্রিক লেখক, গবেষক কিংবা মুক্তিযুদ্ধকালীন চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী হিসেবেও চিকিৎসাবিদ্যায় স্নাতক আহমদ রফিককে মনোনীত করেনি সরকার।

আহমদ রফিক গত জুলাই মাসে পেয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল আজীবন সম্মাননা। এতে আর্থিক যোগ থাকায় সেই প্রাপ্তি তাঁকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
সপ্তাহখানেক আগে সাক্ষাতে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আহমদ রফিক বলেন, এর তো বিকল্প ছিল না। স্বাভাবিক বিদায় যে হবে না, তেমনটা তো অনুমিতই ছিল। তবে এমন সময়েও বামপন্থী রাজনীতিকদের নিস্পৃহতা তাঁকে হতাশ করেছে।

বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে ছড়ানো নানা বিতর্ক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শারীরিক সামর্থ্য থাকলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বর্তমানে যে অহেতুক বিতর্ক ছড়ানো হচ্ছে খুব পরিকল্পিতভাবে, তা নিয়ে তিনি নিশ্চয়ই সরব থাকতেন; লিখতেন ইতিহাসনিঃসৃত গবেষণালব্ধ কথামালা, করতেন নির্মোহ বিশ্লেষণ। তাতে বোঝা যেত এই অঞ্চলে কবে, কোথা থেকে, কীভাবে শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রবিতর্ক। গত শতকের ষাটের দশক থেকে শুরু করে বাংলাদেশে কীভাবে কারা রবীন্দ্রচর্চার বিরোধিতা করে আসছে, সেসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা করলেন আহমদ রফিক। আর বললেন, তাঁর ছোট দুটি গ্রন্থের কথা; ছোটগল্পের শিল্পরূপ: পদ্মাপর্বের রবীন্দ্রগল্প ও রবীন্দ্রভাবনায় গ্রাম: কৃষি ও কৃষক।

রবীন্দ্রসাহিত্যচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ আহমদ রফিক। তাঁর রবীন্দ্রগবেষণায় যে স্বকীয়তা, তা নির্মেদ ও নৈর্ব্যক্তিক। নিজেকে আড়াল করে কীভাবে সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হয়, তার দৃষ্টান্ত আহমদ রফিকের মননশীল গ্রন্থরাজি। কেবল রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়েই তিনি রচনা করেছেন দুই ডজন গ্রন্থ। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত চার খণ্ডের রবীন্দ্রজীবনের মধ্যে দুই খণ্ড তাঁর রচিত। কেবল আলোচনা ওবিশ্লেষণের ঘেরাটোপে সীমাবদ্ধ নয় তাঁর রবীন্দ্র-অধ্যয়ন। নতুন চিন্তার খোরাক পাওয়া যায় তাঁর রবীন্দ্রদৃষ্টিতে। সেখানে থাকে না কোনো মুগ্ধতা। থাকে সমালোচকের তীক্ষ্ণ বীক্ষণপ্রয়াস। যে ধরনের দায়িত্ব পালন করার কথা কোনো শিক্ষাবিদের, তেমন দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন অনায়াস। কেমন ছিলেন জমিদার রবীন্দ্রনাথ? সৃজনশীল দীর্ঘ জীবন কাটানো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য পাঠ না করে অনেকে যখন ভাইরালের এই যুগে তাঁকে আক্রমণ করে বসেন, তখন সেটা শুরু করেন জমিদারদের ‘চিরায়ত’ অত্যাচারী চারিত্র্যকে বিবেচনায় রেখে। মানুষের অজ্ঞতা যখন আবেগ ও ধর্মীয় চেতনায় সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, সে পথ থেকে উত্তরণে একমাত্র মুক্তির পথ হতে পারে যুক্তির পারম্পর্য।

এ জন্যই আহমদ রফিকের গ্রন্থ দুটি বর্তমান সময়ের জন্য বেশি প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সময়ের সঙ্গে গা ভাসাননি, বরং প্রতিনিয়ত সময়ের অভিজ্ঞতায় নিজেকে ঋদ্ধ করেছেন। পিতার নির্দেশে জমিদারির দায়িত্বভার গ্রহণ করা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্থানিক অভিজ্ঞতার কারণে সর্বজনীন জীবনশিল্পীতে উন্নীত হন। তবু তাঁর উপলব্ধি, ‘জমিদারি ব্যবসায়ে আমার লজ্জা বোধ হয়। আমার মন আজ উপরের তলার গদি ছেড়ে নিচে এসে বসেছে। দুঃখ এই যে, ছেলেবেলা থেকে পরজীবী হয়ে মানুষ হয়েছি।’ এ সময় বহু কৃষকবান্ধব প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তার মধ্যে অন্যতম ছিল কৃষিব্যাংক। আহমদ রফিক আমাদের জানান, পতিসরে কৃষিব্যাংক স্থাপনের প্রথম পর্যায়ে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার করেছেন রবীন্দ্রনাথ। করেছেন কৃষকদের ঋণ দিয়ে মহাজনের হাত থেকে তাঁদের বাঁচানোর জন্য। তাতে উপকৃত ও মহাজনের হাত থেকে মুক্ত হতে পেরেছিলেন অসংখ্য কৃষক।

গবেষণা ও লিখতে না পারার অতৃপ্তির মধ্যেই এই ভাষাসংগ্রামী জানান, শ্রুতিলেখকের সহযোগিতায় গত দুই বছরের প্রচেষ্টায় তিনি সম্প্রতি শেষ করেছেন একটি উপন্যাসের কাজ।

এই লেখার মাধ্যমে আমরা আবার দাবি জানাই, রাষ্ট্র আহমদ রফিকের দায়িত্ব নিক, বাকি জীবন যেন তাঁকে আর্থিক ও চিকিৎসাসংক্রান্ত অনিরাপত্তায় ভুগতে না হয়। আহমদ রফিক সুস্থ থেকে শতায়ু লাভ করুন, সেটাই প্রত্যাশা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme