শজনের ডাঁটা সবজি হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়। তবে শজনের পাতা খাওয়ার চলও বেশ পুরোনো। আজকাল আবার শজনেপাতার গুঁড়া খুব চলছে, ইংরেজিতে মরিঙ্গা পাউডার নামে অনলাইনে দারুণ পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে নানা রকম পুষ্টিগুণ আর বলবর্ধক হিসেবে শজনেপাতার গুঁড়া খাওয়ার চল বেড়েছে। শাক হিসেবেও শজনেপাতা খাওয়ার প্রচলন আছে। শজনে খরাসহিষ্ণু ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের উদ্ভিদ। বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও আমাদের দেশে সাধারণত ডাল বা অঙ্গজ জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করানো হয়। গ্রীষ্মকাল বিশেষত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত ডাল রোপণের উপযুক্ত সময়।
শজনেগাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। এ জন্য গবেষকেরা শজনপাতাকে ‘নিউট্রিশনস সুপার ফুড’ উপাধি দিয়েছেন, একই সঙ্গে শজনেগাছকে বলা হচ্ছে মিরাকল ট্রি।
প্রতি গ্রাম শজনেপাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন থাকে। গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান আছে শজনেপাতায়। ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতিজনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। শজনেপাতায় গাজরের চেয়ে বেশি ভিটামিন এ এবং শাকের চেয়ে বেশি আয়রন রয়েছে। পুষ্টির পরিমাণ কাছাকাছি বলে কেউ প্রতিদিন দুধ খেতে না পারলে এক চামচ করে শজনেপাতার গুঁড়া খেতে পারেন।
পালংশাকের চেয়ে তিন গুণ বেশি আয়রন আছে শজনেপাতার গুঁড়ায়ছবি: পেক্সেলস
এতে প্রচুর জিংক থাকে এবং পালংশাকের চেয়ে তিন গুণ বেশি আয়রন বিদ্যমান, যা অ্যানিমিয়া দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শজনে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও অবদান রাখে। মানুষের শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ প্রোটিন, যার গাঠনিক একক হলো অ্যামাইনো অ্যাসিড। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেটাবলিজম এবং অন্য শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলি পরিপূর্ণরূপে সম্পাদনে অ্যামাইনো অ্যাসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের শরীরের যে ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হয়, তার সব কটিই এই মরিঙ্গার মধ্যে বিদ্যমান।
ইউএসডিএর মতে, ১০ গ্রাম শজনেপাতায় ১৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম (ডেইলি ভ্যালু ১৫ শতাংশ), ২ মিলিগ্রাম আয়রন (ডেইলি ভ্যালু ১১ শতাংশ), ১৬০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম ও ৩ গ্রাম প্রোটিন আছে।
মানবদেহে যেসব উপাদানের নিয়মিত প্রয়োজন, তার সবই শজনেপাতায় আছে। এ পাতায় প্ল্যান্ট প্রোটিন ও আয়রনের উপস্থিতি বেশি। এটিকে শুকিয়ে গুঁড়া করে খাওয়া হলে পুষ্টিগুণ ঠিক থাকবে, একদম নষ্ট হবে না।
শজনেপাতার গুঁড়ায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান
শজনেপাতা শরীরে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে। নিয়ম করে দৈনিক শজনেপাতার গুঁড়া সেবন করলে শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে এবং ‘ইমিউনিটি স্টিমুল্যান্ট’ হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের হজমক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। শরীরের ওজন কমাতে ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত শজনেপাতার গুঁড়া খেলে কার্যকরী ফল মেলে। শজনেপাতা মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। ১ টেবিল চামচ শজনেপাতার গুঁড়ায় ১৪ শতাংশ প্রোটিন, ৪০ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ২৩ শতাংশ আয়রন বিদ্যমান। ৬ টেবিল চামচ মরিঙ্গা পাউডার একজন অন্তঃসত্ত্বা এবং স্তন্যদায়ী মায়ের প্রতিদিনের আয়রন এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে। শজনেপাতার গুঁড়ায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এটি যকৃৎ ও কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবেও কাজ করে শজনেপাতা। শজনেতে ৯০টিরও বেশি এবং ৪৬ রকমের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এতে ৩৬টির মতো অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এ ছাড়া এটি অকালবার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে, ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দারুণ কার্যকর।
এখানেই শেষ নয়, শজনেপাতায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা আপনার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে আপনার দেহকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। নিয়মিত শজনেপাতার পাউডার খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। করোনা প্রতিরোধে শজনেপাতা ও ফল উভয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।