1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima
শিরোনাম :
সিরিয়ায় ‘চোরাগোপ্তা’ হামলায় ১৪ পুলিশ নিহত ৪২ ঘণ্টা পর রাঙামাটির নদীতে মিলল নিখোঁজ ২ পর্যটকের লাশ নাশকতা কি না, তদন্তের পর বলা যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাহাড়ে ত্রিপুরা পাড়ায় পুড়েছে ১৭ ঘর, বাসিন্দারা ছিলেন বড়দিনের উৎসবে গণপিটুনি দিয়ে চুন-বালু মেশানো এসিড পানি খাওয়ানো হয় যুবককে, পরে মৃত্যু ছাত্রদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আল্লাহর ওয়াস্তে দুর্নীতি-চাঁদাবাজি থেকে সরে আসুন: আসিফ মাহমুদ যাদুকাটায় পাথর-বালু উত্তোলন, ১৭ শেইভ মেশিন জব্দ জাহাজে ৭ খুন: একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে দিশেহারা সালাউদ্দিন-আমিনুলের পরিবার বিশ্বশান্তি কামনা বড়দিনের প্রার্থনায়

যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানির বিরুদ্ধে কি অ্যাসাঞ্জেরই জয় হলো

  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে দীর্ঘদিনের আশ্রয়। সেখান থেকে কারাবাস। অবশেষে মুক্তি। লাখ লাখ মার্কিন গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের জীবনের ঘটনাবহুল গল্প এটা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি। তবে তা এক বা দুই বছর নয়, প্রায় দেড় দশক।

গতকাল সোমবার কারামুক্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন অ্যাসাঞ্জ। উইকিলিকস এক এক্স পোস্টে বলেছে, মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জ সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছেছেন। ফৌজদারি অপরাধের দোষ স্বীকার করায় ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ কারামুক্ত হয়েছেন।

আসুন, জেনে নিই অ্যাসাঞ্জের কাজ ও তাঁর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের আদ্যোপান্ত।

২০১০

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও উইকিলিকস ২০১০ সালের জুলাইয়ে বিশ্বজুড়ে শোরগোল ফেলে দেয়। ওই সময় থেকে আফগানিস্তান আর ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন সামরিক-কূটনৈতিক নথি ফাঁস করতে শুরু করেন অ্যাসাঞ্জ। এসব নথিতে যুদ্ধকালীন মার্কিনদের বন্দী নির্যাতনের খবরও ছিল।

২০১০ সালের নভেম্বরে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে দুই নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়। জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। অভিযোগ অস্বীকার করেন অ্যাসাঞ্জ। বলেন, ওই ঘটনা ছিল সম্মতিসূচক যৌনসম্পর্কের। পরে লন্ডনে গ্রেপ্তার হন অ্যাসাঞ্জ। জামিনও পান।

২০১১

যুক্তরাজ্যের আদালত ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়ে দেন, অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে পাঠাতে আইনত কোনো বাধা নেই। আপিল করেন অ্যাসাঞ্জ। বলেন, সুইডেন তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে এবং পরে উইকিলিকস সম্পর্কিত মামলায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাঁর বিচার করবে।

২০১২

সুইডেনে ফেরত পাঠানো এড়াতে ২০১২ সালের জুনে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন। আবেদন করেন রাজনৈতিক আশ্রয়ের। ইকুয়েডরের তৎকালীন বামপন্থী প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেরা আবেদন মঞ্জুর করেন। ফলে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্যের বাইরে পাঠানোর পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৭

কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালের মে মাসে সুইডেনের কৌঁসুলিরা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের তদন্তের ইতি টানেন।

ওই বছরেরই ডিসেম্বরে ইকুয়েডর সরকার অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া অ্যাসাঞ্জকে নিজেদের নাগরিকত্ব দেয়। তবে যুক্তরাজ্য সরকার এ উদ্যোগ আটকে দেয়।

২০১৮

ক্ষমতার পালাবদলে তখন ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো। তিনি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মোরেনো জানিয়ে দেন, লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে থাকা অ্যাসাঞ্জকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া তাঁর দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। এর মধ্য দিয়ে অ্যাসাঞ্জের সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।

২০১৯

ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট মোরেনো ২০১৯ সালের এপ্রিলে জানান, লন্ডনে দূতাবাসে থাকা অ্যাসাঞ্জ রাজনৈতিক আশ্রয়ের শর্ত ‘গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছেন। অ্যাসাঞ্জের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

এক দিনের মধ্যে ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জকে বের করে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।

ওই বছরের মে মাসে অ্যাসাঞ্জকে ৫০ সপ্তাহের কারাদণ্ড দেন যুক্তরাজ্যের আদালত। ২০১০ সালে নেওয়া জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে এবার সাজা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসেঞ্জের প্রত্যর্পণের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সুইডেনের কৌঁসুলিরাও অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের পুরোনো তদন্ত নতুন করে শুরু করেন।

২০১৯ সালের মে মাসে মার্কিন বিচার বিভাগ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গোপন নথি ফাঁস করার ষড়যন্ত্রের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, অ্যাসাঞ্জের ১৭৫ বছরের বেশি কারাদণ্ড হওয়ার কথা।

কারাগারে যাওয়ার পর অ্যাসাঞ্জ ভিডিও লিংকের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আদালতে হাজিরা দেন। একই বছরের নভেম্বরে সুইডেনের কৌঁসুলিরা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত বন্ধ করে দেন। বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে ‘শক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য’ কোনো প্রমাণ নেই।

২০২০

সময়টা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি। আদালতের শুনানিতে অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী জানান, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মক্কেলকে ক্ষমা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর বিনিময়ে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিনটনের ই–মেইল ফাঁসের ঘটনায় রুশ সম্পৃক্ততার অভিযোগ অ্যাসাঞ্জকে অস্বীকার করতে হবে। তবে হোয়াইট হাউস এমন কথা অস্বীকার করে।

২০২১

অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের চলমান প্রক্রিয়া ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আটকে দেন লন্ডনের আদালত। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে অ্যাসাঞ্জ আত্মহত্যা করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দেয়, অ্যাসাঞ্জকে মার্কিন ভূখণ্ডে আনা হলে কারাগারে একাকী রাখা হবে না। তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট এক আপিল আদেশে এ রায় স্থগিত করে মামলাটি মূল আদালতে ফেরত পাঠান।

২০২২

অ্যাসাঞ্জকে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আপিলের সুযোগ দেন আদালত। তবে ওই বছরের মার্চে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট আপিল আবেদন শুনতে অস্বীকৃতি জানান।

একই বছরের ১৭ জুন যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাসাঞ্জের যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ অনুমোদন করে। এর বিরুদ্ধে আপিল করেন অ্যাসাঞ্জ।

২০২৪

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংবাদ সম্মেলন করেন অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ। তিনি জানান, তাঁর স্বামীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলে তিনি (অ্যাসাঞ্জ) আর বাঁচবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণে ২০২২ সালে আদালতের যে নির্দেশনা এসেছিল, তার বিরুদ্ধে গত মে মাসে আপিল করার অনুমতি পান অ্যাসাঞ্জ। আগামী ৯ জুলাই এর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য আছে। এরই মধ্যে অ্যাসাঞ্জের কারামুক্তির খবর এল।

উইকিলিকস এক এক্স বার্তায় জানায়, অ্যাসাঞ্জ মুক্ত হয়েছেন। দীর্ঘ কয়েক বছরের আইনি লড়াইয়ের পর গতকাল সোমবার কারামুক্ত হন তিনি। এরই মধ্যে তিনি যুক্তরাজ্যও ছেড়েছেন।

মুক্ত অ্যাসাঞ্জ

উইকিলিকসের বার্তায় বলা হয়েছে, মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জ একটি সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছেছেন। ফৌজদারি অপরাধের দোষ স্বীকার করায় অ্যাসাঞ্জকে কারামুক্ত করা হয়েছে।

উইকিলিকস বলছে, স্থানীয় সময় গতকাল সকালে যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগার থেকে বের হন অ্যাসাঞ্জ। কারাগারের একটি ছোট্ট প্রকোষ্ঠে ১ হাজার ৯০১ দিন বন্দী ছিলেন তিনি। কারাগার থেকে বেরিয়ে অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে যান। গতকাল বিকেলে তাঁর ফ্লাইট ছাড়ে।

এএফপির খবর বলছে, স্থানীয় সময় আগামীকাল বুধবার অ্যাসাঞ্জের যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের তত্ত্বাবধানে থাকা নর্দান মারিয়ানা আইল্যান্ডসে পৌঁছানোর কথা। সেখানে তাঁর ৬২ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যে যে পাঁচ বছর তিনি কারাভোগ করেছেন, সেটিও এ সাজার অন্তর্ভুক্ত হবে।

এর অর্থ হলো, অ্যাসাঞ্জের নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme