“আমরা ভোক্তারা এখন এটা নিয়েই টেনশনে থাকি যে মাছের দাম বাড়বে না মুরগির দাম। তেলের দাম বাড়বে না চালের দাম।”
দেশে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম কমলেও তাতে ভোক্তাদের সাশ্রয় হচ্ছে না।
আলু-পেঁয়াজের মত পণ্যে কেজিতে দু-চার টাকা কমলেও মাংসের বাজারে গিয়ে তা আর পকেটে রাখা যাচ্ছে না। চালের বাজার নিয়ে যে অস্বস্তি, সেটাও রয়ে গেছে।
শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিকেতন ও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ক্রেতারা বলছেন, দেশে এমন ‘দুইটা সপ্তাহ যায় না’, যেখানে সব জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল থাকে।
চালের বাজার চড়া
গেল সপ্তাহে হুট করে চালের দাম বাড়তে শুরু করে, যা এখনও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বিক্রেতাদের ভাষ্য, পাইকারিতে বাড়ার কারণে খুচরায় প্রকারভেদে চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে।
এখন দেশে আমন ধানের মৌসুম। বাজারে আমন ধান-চালের সরবরাহও আছে। তবুও চালের দাম বেড়েছে।
কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, ধানের দাম বাড়তি থাকায় চালকলের মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার গত ৩১ অক্টোবর আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে। কিন্তু চালের বাজারে তার দৃশ্যমান প্রভাব নেই।
রাজধানীর নিকেতন বাজারের বিক্রেতা শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গেল এক সপ্তাহে বস্তাপ্রতি বিভিন্ন চালের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত।”
খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল কেজিতে ৪ টাকা ৭৬ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাজিরশাইল গেল সপ্তাহের মতই কেজিপ্রতি ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি নতুন আটাশ গেল সপ্তাহের তুলনায় ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়। আর পুরাতন আটাশ ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বাজারের বিক্রেতা নিরঞ্জন সাহা বলেন, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এ কারণেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে।
“চালকলগুলোর মালিকরা আমাদের বলেছেন, ধানের দাম বাড়ায় তারা বাধ্য হয়ে চালের দাম বাড়িয়েছেন। এখন ধান প্রতিমণ দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়ে গেছে।”
মহাখালী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আব্দুল জব্বার বলেন, “বন্যায় এবার ধানের ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। সেজন্য মিলাররা বাড়তি দামে ধান কিনেছেন। আর চালের দামও বেড়েছে।”
রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে।
ব্রয়লার মুরগির দামেও সুখবর নেই
চালের পাশাপাশি ক্রেতাদের জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছে ব্রয়লার মুরগির দামও। গেল সপ্তাহে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লারের কেজি ২০০ টাকায় ঠেকেছে।
তবে ‘সোনালি’ মুরগি আগের দামে প্রতিকেজি ৩২০ টাকা ও ‘কক’ প্রতিকেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিকেতন কাঁচাবাজারের মুরগি বিক্রেতা হারুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মুরগির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে। এটা তো কমা-বাড়ার মধ্যেই থাকে। এখন বেড়েছে, আবার কমবে।”
‘কয়েকদিনও স্বস্তিতে থাকা যায় না’
বাজারে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা। তারা বলছেন, প্রত্যেক সপ্তাহে কিছু না কিছুর দাম বাড়বেই।
মহাখালী কাঁচাবাজারে আসা বেসরকারি চাকুরে ওমর ফারুক বলেন, “গেল কয়েক সপ্তাহ কাটল তেল নিয়ে। এখন আবার চালের দাম বাড়ছে। বিক্রেতারা যেন কোনোভাবেই ক্রেতাদের স্বস্তিতে থাকতে না দেওয়ার নিয়ত করেছে।
“আমরা ভোক্তারা এখন এটা নিয়েই টেনশনে থাকি যে মাছের দাম বাড়বে না মুরগির দাম। তেলের দাম বাড়বে না চালের দাম।”
একই বাজারে আসা গৃহিণী সেলিনা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মিনিকেট চাল খাই। গত সপ্তাহ থেকে দাম বাড়ছে। মানে একটা না একটা কিছুর দাম বাড়াতেই হবে। এরকম দুইটা সপ্তাহ যায় না যে, সব জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল থাকবে।”
কমেছে আলু-পেঁয়াজের দাম
দীর্ঘদিন ধরেই চড়তে থাকা আলুর দাম কমেছে। গেল সপ্তাহের তুলনায় আলুর কেজি ১০ টাকা কমেছে।
বাজারগুলোতে নতুন আলুর দাম ৭০ টাকা থেকে কমে ৬০ টাকায় নেমেছে। নতুন আলুর সরবরাহ বাড়ায় পুরনো আলুর দামও কেজি প্রতি ১০ টাকা কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ভালো মানের পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেক কমেছে।
বাজারগুলোতে দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। দেশি নতুন পেঁয়াজ পড়ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
এসব বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৭০ টাকা, পাতা পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সবজি বাজার স্থিতিশীল
রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে দাম কমেছে। প্রায় সব সবজি ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
বাজারগুলোতে মানভেদে প্রতিকেজি বেগুন ৬০-৭০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০-৩০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, ডাটা ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটল ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ৭০, ক্ষিরা ৪০ থেকে ৫০, টমেটো ৮০ থেকে ১০০, শিম ৪০-৫০, ফুলকপি আকৃতিভেদে ৩০ থেকে ৫০, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৬০, শালগম ৪০ ও শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।