মাত্র ছয় মাস—এই স্বল্প সময়ের রাজনৈতিক যাত্রাই ওলট-পালট করে দিয়েছে সাকিব আল হাসানের জীবন। গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ছবি ও দর্শকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে সাকিব নিজেই নিজের পথ কঠিন করে তুলেছেন। অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ উঠেছে, সেই সঙ্গে দুর্নীতির খবরও সামনে এসেছে।
সম্প্রতি দেশের একটি ইংরেজি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাকিব খোলামেলা কথা বলেছেন তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে।
সাকিব মনে করেন, রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত তাঁর জন্য ভুল ছিল না। বরং তিনি বলেন,
“যদি আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ভুল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য যে কেউ রাজনীতিতে আসলে সেটাও ভুল হবে। রাজনীতি যেকোনো নাগরিকের অধিকার। আমি যখন যোগ দিয়েছিলাম, তখন মনে করেছিলাম সঠিক কাজ করছি এবং এখনো তাই বিশ্বাস করি।”
তাঁর দাবি, মাগুরার মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, মাগুরার মানুষ তাঁকে চেয়েছিল।
নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তিনি বলেন,
“আমি বিশ্বাস করি, আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল। আবার নির্বাচনে অংশ নিলে, আমিই জিতব। মানুষ আমাকে সুযোগ দিয়েছিল, যদিও আমি যেভাবে সেবা করতে চেয়েছিলাম, তা পুরোপুরি করতে পারিনি। এটা আমি মেনে নিয়েছি।”
সাকিব বলেন,
“কেউ যদি সমাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে চায়, তাহলে তাকে সিস্টেমের অংশ হতে হবে। বাইরে থেকে পরিবর্তন সম্ভব নয়। যারা এখন দেশ চালাচ্ছে, তারাও তো একসময় সিস্টেমের বাইরে ছিল, কিন্তু পরিবর্তনের জন্য সিস্টেমে ঢুকেছে।”
তাঁর নিজের কথায়,
“আমি রাজনীতিতে মাত্র ছয় মাস ছিলাম। নির্বাচনের পর তিন দিনের জন্য মাগুরা গিয়েছিলাম। বাকি সময়টা ক্রিকেট খেলেছি এবং দেশের বাইরে থেকেছি। কাজেই রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িত হইনি।”
অভ্যুত্থানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা তুলে ধরে সাকিব বলেন,
“প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘তোমার রাজনীতি করতে হবে না, তুমি শুধু ক্রিকেটে মন দাও।’ আমি সে পরামর্শ মেনেই চলেছি।”
তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা এবং পরে ধাপে ধাপে রাজনীতির দিকে মনোযোগ দেওয়া।
সাকিব আল হাসান বলেন,
“অনেকে হয়তো মনে করে আমি ভুল করেছি। কিন্তু মাগুরার মানুষ আমাকে চায়—আমি এখনো তা বিশ্বাস করি। আমার উদ্দেশ্য কখনোই ভুল ছিল না, এবং আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েই রাজনীতিতে এসেছি।”
এই পুরো অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট, রাজনীতিতে পা রাখার সিদ্ধান্ত সাকিবের জন্য যেমন চ্যালেঞ্জিং ছিল, তেমনি এটি ছিল একটি সাহসী ও অভিজ্ঞতামূলক অধ্যায়, যা হয়তো ভবিষ্যতের পথচলায় প্রভাব ফেলবে।