মসৃণ ত্বক লাভ করতে এই শক্তিশালী উপাদান ব্যবহার করা হয়।
সিট্রিক বা টক ধরনের ফলে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান সিট্রিক অ্যাসিড দিয়ে নানান ধরনের রূপচর্চার সামগ্রী তৈরি করা হয়।
সাধারণত ‘এক্সফলিয়েট’ করার পাশাপাশি উজ্জ্বল করা ছাড়াও ত্বক পরিচর্যার নানান এক্ষেত্রে এই অ্যাসিড কাজে লাগে।
ই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের রূপচর্চার প্রসাধনী তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘ফেইস রিয়ালিটি স্কিনকেয়ার’য়ের রূপবিশেষজ্ঞ ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপক অ্যালেক্স হার্নানডেজ বলেন, “সিট্রিক অ্যাসিড হল ‘আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (এএইচএ), যা প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজের মাধ্যমে ত্বকের ক্ষারীয় মাত্রার সমন্বয় ও পুনরুদ্ধারে কাজ করে।”
উপকারিতা
“ত্বক পরিচর্যার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরিতে এই উপাদান ব্যবহার করা হয়। এমন না যে, সরাসরি দেওয়া থাকে। বেশিরভাগ সময় ত্বকের ক্ষারীয় মাত্রা ব্যবস্থাপনার এটা কাজে লাগে”- একই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন টরন্টো নিবাসী ভারতীয় বংশদ্ভূত ত্বক-বিশেষজ্ঞ গীতা যাদভ।
এতে থাকা এএইচএ ত্বকের সাথে মৃত কোষের বন্ধন ভেঙে ফেলতে পারে। ফলে স্বাস্থ্যকর ত্বক পাওয়ার পাশাপাশি দেখতে উজ্জ্বল লাগে। এছাড়া চামড়ার স্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, এই প্রক্রিয়া সাধারণত বয়সের সাথে সাথে কমে আসে- ব্যাখ্যা করেন গীতা।
“অ্যাসিড হলেও প্রাকৃতিক হওয়াতে ত্বক ‘এক্সফোলিয়েট’ করে মৃদুভাবে। যে কারণে ত্বকের মলিনভাব দূর হয়”- বলেন নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘মাউন্ট সিনাই স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক ও ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. জেনিফার গ্রাফ।
ব্যবহার পদ্ধতি
সিট্রিক অ্যাসিড যদি এএইচএ হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে ত্বক পরিচর্যার সামগ্রীতে মেশানো অবস্থাতেই মাখা উচিত- পরামর্শ দেন ডা. গীতা যাদভ।
তিনি আরও বলেন, “আর এটা অবশ্যই রাতের রূপচর্চার রুটিনে রাখতে হবে। কারণ সূর্যের আলোতে এএইচএ বেশি সংবেদনশীল হয়। আর সংবেদনশীলতা কমাতে অন্যান্য উপাদানের সাথে মেশানো আছে এমন পণ্য দেখে ব্যবহার করতে হবে।”
হার্নানডেজ বলেন, “বিভিন্ন প্রসাধনীতে সিট্রিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। তবে মনে রাখতে হবে সেগুলোতে যেন প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদান থাকে। যা ত্বকে একটা সুরক্ষার স্তর তৈরি করে।”
তাই এএইচএ’র সাথে হায়ালুরনিক অ্যাসিড, বিসাবোলোল ও অ্যালানটোন সমৃদ্ধ উপাদান বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সিট্রিক অ্যাসিড মৃদু হিসেবে গণ্য করা হলেও এটা একটা অ্যাসিড। মানে ত্বকে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
ডা. গ্রাফ বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকে এটা ব্যবহার করা একদমই ঠিক না। সংবেদনশীলতার মাত্রা বেশি বা ত্বকে যদি কোনো সমস্যা থাকে তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে নিতে হবে।”
যেসব উপাদানের সাথে ব্যবহার করা যাবে না
বাজারে সিট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ সেরাম থেকে শুরু করে নানান ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই স্যালিসাইলিক গ্লাইকোলিক, ল্যাক্টিক ও ম্যানডেলিক অ্যাসিড’য়ের সাথে মিশ্রিত করা কি-না, দেখে নিতে হবে। পাশপাশি আর্দ্রতা রক্ষা করে এমন উপাদান যেমন- হায়ালুরনিক অ্যাসিড বা গ্লিসারিন সম্বলিত প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে।
“তবে রেটিনল’য়ের সাথে সিট্রিক অ্যাসিড মেশানো যাবে না কারণ এতে চরম অস্বস্তি তৈরি করবে আর ত্বক হয়ে যাবে খসখসে”- বলেন ডা. গ্রাফ।
ই বিষয়ে সম্মতি জানিয়ে ডা. যাদভ আরও বলেন, “বেশি নয় সিট্রিক অ্যাসিড অল্প মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে এমন পণ্য প্রাধান্য দিতে হবে। যেসব রূপচর্চার প্রসাধনীতে উচ্চমাত্রায় এএইচএ’য়ের সাথে রেটিনল বা ‘বিএইচএ’ থাকে সেগুলো পরিহার করা উচিত।”
কতটা ঘন ঘন ব্যবহার করা যায়?
ডা. যাদভ ও গ্রাফের মতে- সপ্তাহে দুবারের বেশি এই রাসায়নিক ব্যবহার করা যাবে না।
“কিছু পণ্য থাকে যেগুলো তৈরি করা হয় ঘন ঘন ব্যবহারের জন্য। সেগুলো ত্বকে সহ্য হলে অবশ্য ধীরে ধীরে ব্যবহারের মাত্রা বাড়ানো যেতে পারে”- বলেন ডা. যাদভ।
তবে সিট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ প্রসাধনী ব্যবহারের আগে ‘প্যাচ টেস্ট’ বা পরখ করে নেওয়া এবং ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে।