সালাউদ্দিনের ছেলে নাঈম শেখ বলেন, “আমার বাবার আয়ে আমাদের পুরো পরিবারের খরচ চলত।”
চাঁদপুরে জাহাজ এমভি বাখেরায় নিহতদের মধ্যে দুজনের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়; তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম
লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের এগারোনলি গ্রামের সালাউদ্দিন মোল্লা জাহাজে চাকরি করছেন প্রায় দুই দশক ধরে। তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পরিবার ও এলাকাবাসী।
সালাউদ্দিন মেল্লার ছেলে নাঈম শেখ বলেন, “আমার বাবা আল বাখেরা জাহাজের ইঞ্জিন চালক ছিলেন। তার আয়ে আমাদের পুরো পরিবারের খরচ চলত। তার মৃত্যুতে আমাদের পুরো পরিবার এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।”
৪০ বছর বয়সী সালাউদ্দিন এগারোনলি গ্রামের মৃত আবেদ শেখের ছেলে।
সোমবার বিকালে হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে এমভি আল বাখেরাহ জাহাজ থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় গুরুতর আহত আরো তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
গুরুতর অবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাকি একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নিহত বাকিরা হলেন- ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার জোয়াইর এলাকার মো. কিবরিয়া (মাস্টার), একই এলাকার শেখ সবুজ (৩৫) লস্কর, মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার চরষশোমন্তপুর এলাকার মো. মাজেদুল (১৬) লস্কর, একই উপজেলার পলাশ বাড়িয়া এলাকার সজিবুল ইসলাম (২৬) লস্কর, জাহাজের বাবুর্চি মুন্সীগঞ্জের রানা (২০) ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর লংকারচর গ্রামের নান্না মুন্সীর ছেলে আমিনুল মুন্সী (৪১)।
নিহত সালাউদ্দিন যে ইউনিয়নের বাসিন্দা সেই লাহুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রানা কাজী বলেন, “গত ১৪ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে কাজে যান সালাউদ্দিন। অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সংসারে মা, স্ত্রী, এক সন্তান ও দুই মেয়ে রয়েছে তার। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দিশেহারা তার পুরো পরিবার।”
পরিবারের উর্পাজনক্ষম ব্যাক্তিদের হারিয়ে দিশেহারা আমিনুল মুন্সীর পরিবারও। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। স্ত্রী নাদিরা বেগমসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে তার।
“আমিনুল সংসারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ছিল”, বলছিলেন তার বড় ভাই হুমায়ুন মুন্সী।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমার ভাই প্রায় ১২ বছর ধরে জাহাজে সুকানি হিসাবে কর্মরত ছিল। সে গ্রামের বাড়ি থেকে শুক্রবার কাজে যোগ দেয়। সোমবার তার খুন হওয়ার খবর পাই। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।”
মরদেহ দুটি বাড়িতে পৌঁছানোর পর নিজ নিজ বাড়িতে দাফন করা হবে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।