1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি নিহত

  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। হেলিকপ্টারে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদোল্লাহিয়ানসহ আরও সাতজন। তাঁদের কেউ বেঁচে নেই। ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় উদ্ধার তৎপরতার পর গতকাল সোমবার সকালে হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পাওয়া যায়। এরপর তাঁদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে ইরান সরকার।

প্রতিবেশী দেশ আজারবাইজানের সীমান্ত এলাকায় একটি যৌথ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প উদ্বোধন করে গত রোববার দুপুরে ওই হেলিকপ্টারে করে ফিরছিলেন রাইসি। সেখান থেকে ১৭০ কিলোমিটার দূরের ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে যাত্রা করেন। ৫৮ কিলোমিটার যাওয়ার পর পর্বতঘেরা ভারজাগান এলাকায় বিধ্বস্ত হয় হেলিকপ্টারটি। ওই বহরে আরও দুটি হেলিকপ্টার ছিল। তবে সেগুলো নিরাপদে অবতরণ করে।

বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারে রাইসি ও আবদোল্লাহিয়ান ছাড়াও ছিলেন পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালিক রহমতি, ওই প্রদেশের ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা দলের প্রধান সরদার সায়েদ মেহদি মৌসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট তাহের মোস্তাফাভি, কো-পাইলট মোহসেন দারইয়ানুশ ও ফ্লাইট টেকনিশিয়ান বাহরোজ গাদিমি।

ইরানের সরকারি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ঘটনাস্থলে ঘন কুয়াশা ছিল। পরে আবহাওয়া আরও বৈরী হয়। এর মধ্যে উদ্ধারকাজে নামে ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ সামরিক বাহিনী, পুলিশসহ ৪০টির

ইরানের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ নামি বলেন, হেলিকপ্টারের সব আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরও খামেনির মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম এক ঘণ্টা জীবিত ছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন।

প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর পর ইরানে পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। আজ মঙ্গলবার তাবরিজ শহরে প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ নিহত ব্যক্তিদের জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর মরদেহগুলো রাজধানী তেহরানে নেওয়া হবে।

ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ১৯৬০ সালে উত্তর-পূর্ব ইরানের মাশহাদে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি তেহরানের পার্শ্ববর্তী শহর কারাজের প্রসিকিউটর জেনারেল নিযুক্ত হন। এরপর বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৯ সালে তাঁকে বিচার বিভাগের প্রধান নিযুক্ত করেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রাইসি। কট্টরপন্থী এই নেতাকে খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হতো।

বেশি উদ্ধারকারী দল। উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করে তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও। তবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হয়।

১৬ ঘণ্টার বেশি সময় পর গতকাল সকালে ভারজাগানের পাহাড়ে জঙ্গলের মধ্যে সন্ধান পাওয়া যায় হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষের। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, পাহাড়ে গাছপালার ভেতরে হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে।

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর সামনে আসার পর থেকে ইরানজুড়ে শুরু হয় তাঁর জন্য প্রার্থনা। গতকাল তাঁর মৃত্যুর পরও তেহরানসহ বিভিন্ন শহরের মসজিদ, মাজার এমনকি সড়কে প্রার্থনা ও শোক প্রকাশ করছেন লোকজন।

তাঁদেরই একজন ইরানের পবিত্র শহর কোমের আধা সামরিক বাহিনী বাসিজের সদস্য মোহাম্মদ হোসেইন জারাবি বলেন, ‘তিনি একজন কঠোর পরিশ্রমী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। আমরা যত দিন বেঁচে আছি, তত দিন তিনি সবার মাঝে থাকবেন।’

রোববার হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় জোলফা এলাকায় ঘন কুয়াশা ছিল। বৃষ্টিও হচ্ছিল। গতকাল প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবর ঘোষণার সময় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়, ‘খারাপ আবহাওয়ার’ কারণে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে।

হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে ধারণা পেতে বেসামরিক বিমান পরিবহনবিশেষজ্ঞ কাইল বেইলির সঙ্গে কথা বলেছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। তিনি বলেন, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে হেলিকপ্টারটির পাইলটরা সহায়তা চেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেননি। ফলে কোনো সন্দেহ নেই যে যান্ত্রিক ক্রটির কারণে হেলিকপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যার মুখে পড়েছিলেন তাঁরা।

কাইল বেইলি আরও বলেন, কোনো হেলিকপ্টার যখন আকাশে থাকতে বড় যান্ত্রিক সমস্যার মুখে পড়ে, তখন পাইলটের প্রথম কাজটা হয় সেটিকে আকাশে ভাসিয়ে রাখা। এরপর সহায়তার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা। তবে তার আগেই হয়তো হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। এ ছাড়া খারাপ আবহাওয়ার কারণেও এটা ঘটতে পারে।

প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী ওই হেলিকপ্টার ছিল বেল-২১২ মডেলের। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই হেলিকপ্টার ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের আগে হাতে পেয়েছিল তেহরান। সে হিসাবে এটি বেশ পুরোনো। এর আগেও একবার ইরানে বেল-২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। ২০১৮ সালের এপ্রিলে দেশটিতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে উদ্ধারের সময় বিধ্বস্ত হয়েছিল হেলিকপ্টারটি।

হেলিকপ্টারটি কীভাবে বিধ্বস্ত হলো, তা খতিয়ে দেখতে গতকাল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইরান। এ বিষয়ে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে রাশিয়া বলেছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার সঠিক কারণ বের করতে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দিতে প্রস্তুত তারা।

ইসরায়েল কী বলছে

ইসরায়েল গাজায় হামলা শুরু করার পর থেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে ইরান। তেহরান সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলাও চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলায় ইরানের এক শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার নিহত হওয়ার জেরে গত এপ্রিলে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনাও ঘটে। এর সূত্র ধরে একটি জল্পনা উঠেছে যে প্রেসিডেন্ট রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে ইসরায়েলের হাত থাকতে পারে। তবে এমন দাবি নাকচ করেছেন ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।’

অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তাঁর পরে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি সরকারপ্রধান। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, কোনো কারণে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে তাঁর পদে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবেন প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট। সে হিসেবে রাইসির মৃত্যুর পর তাঁর স্থলে প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। আর উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানিকে দেশটির ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মুখপাত্র হাদি তাহান নাজিফ এক সাক্ষাৎকারে জানান, সংবিধান মেনে সর্বোচ্চ নেতার অনুমোদনের ভিত্তিতে মোহাম্মদ মোখবার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর সর্বোচ্চ ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। সর্বোচ্চ নেতার অনুমতি নিয়ে গার্ডিয়ান কাউন্সিল নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করবে।

রাইসির মৃত্যুতে শোক

প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। এ মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ অনেকে।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন গতকাল ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে ফোন করেছেন। তিনি বলেছেন, রাইসির আকস্মিক এই মৃত্যুর পরও তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে চায় মস্কো। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে রাইসি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা বিস্তারিত শোনেন পুতিন। কাজেম জালালি বলেন, এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme