এক বছর আগে কুমিল্লার ফেডারেশন কাপের ফাইনাল ম্যাচটার কথা কি মনে আছে?
মোহামেডান-আবাহনীর সেই ম্যাচ রোমাঞ্চের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিল। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ অমীমাংসিত ছিল ৪-৪ গোলে। পরে টাইব্রেকারে আবাহনীকে হারিয়ে মোহামেডান ১৪ বছর পর জিতেছিল শিরোপা। সে ম্যাচেই দেশের ফুটবলপ্রেমীরা প্রথম চিনেছিলেন গোলরক্ষক সুজন হোসেনকে। মোহামেডানের গোলবারে দাঁড়িয়ে খেলেছিলেন বীরের মতো।
ম্যাচের শেষ দিকে অবশ্য আবাহনীর এক ফরোয়ার্ডের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মক আঘাত পেয়ে কাঁধের হাড় ভেঙে গিয়েছিল সুজনের। টাইব্রেকারে থাকতে পারেননি। তাঁর হাত থেকে ব্যাটনটা হাতে পেয়েছিলেন আহসান হাবীব। তিনি সেরেছিলেন বাকি কাজটা।
গত মৌসুমে মোহামেডানের ১ নম্বর গোলকিপারও ছিলেন না সুজন। আহসান হাবীবের জায়গায়ই কয়েকটি ম্যাচে সুজনকে খেলিয়েছিলেন কোচ আলফাজ আহমেদ। পরে আস্থা রাখেন তাঁর ওপরই। সুজনও দেন আস্থার প্রতিদান। আহসান হাবীব এ মৌসুমে বাংলাদেশ পুলিশ এফসিতে চলে যাওয়ার পর সুজনই মোহামেডানের ১ নম্বর গোলরক্ষক।
দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়ে সেই সুজনই এখন মোহামেডানের আস্থার প্রতীক। তাঁর ওপর আস্থা রেখেছেন জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও। মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অস্ট্রেলিয়া ও লেবাননের বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ দুই ম্যাচের ২৬ জনের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন সুজন।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় দলের স্কোয়াড ঘোষণা করার পর সবার নজর আটকে যায় সুজনের ওপরই। কাল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে রিপোর্ট করেছেন কোচের কাছে। আজ কিংস অ্যারেনায় জাতীয় দলের হয়ে প্রথম অনুশীলনে নামলেন। সুজনের জন্য দিনটি ছিল গৌরব আর তৃপ্তির।
কিংস অ্যারেনায় বসেই প্রথম আলোকে বললেন নিজের অনুভূতি, ‘জাতীয় দলের অনুশীলনে আজই প্রথম নামছি। কিছুক্ষণ আগে প্র্যাকটিসের সরঞ্জাম যখন হাতে পেলাম, তখন প্রচণ্ড আনন্দ হচ্ছিল। একজন খেলোয়াড়ের কাছে এর চেয়ে গর্বের কিছু আর হয় নাকি!’কিংস অ্যারেনার অনুশীলন মাঠে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সতীর্থরা অভিনন্দন জানালেন সুজনকে। এক সিনিয়র খেলোয়াড় মজা করে বললেন, ‘আরে সুজন, তোর গায়ে গোলকিপিং জার্সিটা দারুণ মনিয়েছে!’ সুজন শুনছিলেন আর হাসছিলেন। সেই হাসিতে মিশে ছিল অর্জনের আনন্দ।
জাতীয় দল নিয়ে সুজনের কথা, ‘জানি না একাদশে সুযোগ পাব কি না। মিতুল (মিতুল মারমা), শ্রাবণ আছে (মেহেদী হাসান শ্রাবণ), সুযোগ পাওয়াটা বেশ কঠিন। আমি জানি, আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। অনুশীলনে ভালো করে কোচের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। কোচ যদি সুযোগ দেন, তাহলে নিজেকে উজাড় করে দেব।’
এরই মধ্যে সুজনের ডাক পড়ে মিগুয়েল অ্যাঙ্গেল ইগলেসিয়াস আনিদোর ক্লাসে। স্কোয়াডের তিন গোলকিপার মিতুল মারমা, মেহেদী হাসান আর সুজন হোসেনকে আলাদা করে মাঠের এক প্রান্তে নিয়ে গেলেন বাংলাদেশ দলের স্প্যানিশ গোলকিপিং কোচ। শুরু হলো সুজনের ক্যারিয়ারের নতুন এক অধ্যায়।