অন্ত্র বা হজম তন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য চাই স্বাস্থ্যকর ‘মাইক্রোবায়োটা’।
ব্যাক্টেরিয়া ও নানান অনুজীবের সমষ্টিকে বলা হয় ‘মাইক্রোবায়োটা’- যা হজম প্রক্রিয়া, রোগ প্রতিরোধ কার্যপ্রণালী এমনকি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যে প্রভাব রাখে।
খাবার নিয়মিত ভালোভাবে হজম হওয়া, মাঝেমধ্যে পেটে সমস্যা হলেও শক্তির মাত্রা সঠিক থাকা- এই বিষগুলোকে সুখী ‘মাইক্রোবায়োটা’র নিদের্শন হিসেবে কাজ করে।
কানাডা ভিত্তিক পুষ্টিবিদ সারাহ গ্লিনস্কি এইসব তথ্য জানিয়ে ইটদিন ডটকম’য়ে প্রকাশত প্রতিবেদনে আরও বলেন, যদিও খাবারের মাধ্যমেই মাইক্রোবায়োটা’র সুস্বাস্থ্য নির্ভর করেন। তবে চিনি, খাবারে দেওয়া কৃত্রিম স্বাদ, রং এবং অন্যান্য উপাদান ‘মাইক্রোবায়োটা’র স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নষ্ট করে দিতে পারে।”
তাই অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবার নির্বাচনের সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
অতিরিক্ত মিষ্টি দেওয়া দই
সাধারণভাবেই বলা হয় দই পেটের জন্য ভালো। এই প্রোটিন ও প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন শরীরে শক্তি যোগায় তেমনি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
তবে এই দইতেই যদি চিনি, রং বা কৃত্রিম স্বাদ দেওয়া হয় তবে সেটা আর অন্ত্রের উপকার বয়ে আনে না।
তাই পুষ্টিবিদ গ্লিনস্কি পরামর্শ দেন, “যতটা সম্ভব সাধারণ দই খেতে হবে। টক দই খাওয়া বেশি উপকরী। আর এড়াতে হবে মিষ্টি ও কৃত্রিম রং দেওয়া দই।”
কৃত্রিম মিষ্টির কোমল পানীয়
অনেকেই ডায়েট পানীয় স্বাস্থ্যকর চিন্তা করে পান করেন। এসব পানীয়তে প্রায় সময় কৃত্রিম চিনি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ‘স্পার্টাম’ এবং ‘সুক্রোল্স’।
“গবেষণায় দেখা গেছে এসব কৃত্রিম মিষ্টি অন্ত্রের ‘মাইক্রোবায়োটা’তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে”- বলেন গ্লিনস্কি।
যদি বুদবুদ যুক্ত পানি গ্রহণ করতেই চান তবে ডায়েট কোমল পানীয়র পরিবর্তে ‘স্পার্কলিং ওয়াটার’ পান করা যেতে পারে।
কাম্বুচা
এই পানীয় হল গাঁজিয়ে তৈরি করা এক ধরনের চা, প্রোবায়োটিক থাকে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এই চা’য়ের স্বাদ বৃদ্ধি করতে গিয়ে চিনি মেশায়। ফলে অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষতি সাধন হয়।
পাস্তুরিত গাঁজানো খাবার
আঁচার, কিমচি বা এই ধরনে গাঁজানো পদ্ধতিতে তৈরি করা খাবার অন্ত্রের জন্য উপকারী। তবে পাস্তুরিত করলে বেশিরভাগ উপকারী ব্যাক্টেরিয়া মারা যায়।
জীবন্ত ব্যাক্টেরিয়া ছাড়া এসব খাবার অন্ত্রে বাজে প্রভাব ফেলে। ‘মাইক্রোবায়োটা’তে ভারসাম্যহীনতা আনে।
তাই গাঁজানো খাবার পাস্তুরিত করা ছাড়াই খাওয়া উপকারী।
গ্লুটেন মুক্ত প্যাকেটজাত খাবার
গ্লুটে মুক্ত খাবার যদিও ভালো। তাবে অনেক গ্লুটেন মুক্ত করা খাবারে আলাদা স্বাদ যুক্ত করতে গিয়ে প্রক্রিয়াজাত স্টার্চ বা মাড় এবং ‘ইমালসিফায়ার’ যুক্ত করা হয়।
পরীক্ষাগারে করা গবেষণায় দেখা গেছে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে ‘ইমালসিফায়ার’ যুক্ত করলে অন্ত্রের ভেতরে স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে প্রদাহ তৈরি করে।
পাশাপাশি গ্লুটেম মুক্ত খাবারগুলোতে আঁশের পরিমাণও কম থাকে। যা অন্ত্রে থাকা অনুজীবদের প্রধান জ্বালানী।
তাই প্রাকৃতিকভাবে গ্লুটেন মুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন- কিয়োনা, বাদামি চাল এবং মিষ্টি আলু।
প্রাণিজ নয় এমন দুগ্ধজাত খাবার
যাদের প্রাণিজ দুগ্ধজাত খাবার সহ্য হয় না, তাদের জন্য উদ্ভিজ্জ দুগ্ধজাত খাবার হতে পারে স্বাস্থ্যকর বিকল্প। তবে এই ধরনের খাবারে অনেক সময় স্বাদ বর্ধক কৃত্রিম উপাদান মেশানো হয়। যা অন্ত্রের জন্য ভেো নয়।
কৃত্রিম স্বাদ দেওয়া ইন্সট্যান্ট ওটমিল
মনে হতে পারে ইন্সট্যান্ট ওটস স্বাস্থ্যকর। তৈরি করা সহজ বলে সময় বাঁচে। তবে এসবে বেশিরভাগ সময় চিনি ও কৃত্রিম উপাদান মেশানো হয়। ফলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যে বারোটা বাজতে পারে।
তাই সাধারণ ওটস খাওয়া উপকারী।
চিনিযুক্ত ফলের রস
বাজার থেকে কেনা ফলের রস স্বাস্থ্যকর মনে হতে পারে। তবে এসবে প্রায় সময় অতিরিক্ত চিনি মেশানো থাকে। যা ওজন যেমন বাড়ায় তেমনি অন্ত্রের স্বাস্থ্যেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
পাশাপাশি যেগুলোতে চিনি দেওয়া থাকে না বলে দাবি করা হয়, সেগুলোতে থাকতে পারে ফ্রুক্টোস। আর দেহ ঠিক মতো ফ্রক্টোস হজম করতে পারেন না। ফলে বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে পেটে তৈরি হতে পারে গ্যাস, হতে পারে পেটফোলা-ভাব এবং ডায়রিয়া।
তাই বাজার থেকে কেনা ফলের রসের চাইতে সরাসরি ফল খাওয়া উপকারী। যেখান থেকে মিলবে অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদানসহ অন্ত্রের উপকারী আঁশ।