1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima

‘তুফান’ যেভাবে দেখলাম, যেমন দেখলাম

  • আপডেট : শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪

মুক্তির দিনই ‘তুফান’ দেখব বলে মনস্থির করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটি জরুরি কাজে আটকে যাওয়ায় সম্ভব হয়নি। পরদিন দেখব কিন্তু পান্থপথের স্টার সিনেপ্লেক্সে টিকিট পেলাম না। অগত্যা ‘কাল দেখব’ এই মিথ্যা সান্ত্বনা নিয়েই ফিরতে হলো। মিথ্যা সান্ত্বনা বলছি এ কারণে যে টিকিট যে কালকে পাব, সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ ছিল।

ফলে একপ্রকার খারাপ লাগা নিয়েই বাসা থেকে বের হই। মধুমিতা হলের সামনে পৌঁছাতেই রিকশা থামাতে বলি। ভিড়, টিকিটের জন্য লাইন দিয়ে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। একটা টিকিটের ব্যবস্থা যদি হয়, এমন একটা আশা নিয়েই রিকশা থেকে নেমে হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ চোখে পড়ল এক পরিচিত ব্যক্তি শুকনা মুখে হলের পাশে এটিএম বুথের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। শো শুরু হতে তখনো ৩০-৩৫ মিনিট বাকি।

কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি, যাকে সঙ্গে নিয়ে সিনেমাটি তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, সেই মানুষটা কাজে আটকে যাওয়ায় আশাহত হয়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে পরিচিতের বেদনায় ব্যথিত হওয়া উচিত।

কিন্তু কেন জানি না কথাটা শুনে আনন্দ জেগে ওঠে মনে। ইতস্তত না করে লজ্জার মাথা খেয়ে কথাটা বলেই ফেলি, ‘যদি কিছু মনে না করেন, টিকিটটা দিলে আপনাকে সঙ্গ দিতে পারতাম। যে অবস্থা দেখছি, লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’ মুখ খুলে হাসলেন তিনি। কাঁধে একটা চাপড় দিয়ে বললেন, ‘মশকরা করো, চলো দোতলায় যাই।’

শাকিব খানের অভিনয় এত সুন্দর, এত চমৎকারভাবে ‘তুফান’ চরিত্রটিকে তিনি ধারণ করেছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কথা বলার ধরন, অঙ্গভঙ্গি থেকে প্রতিটি দৃশ্যায়নে মুহুর্মুহু ‘তুফানি’ জোশ ফুটে উঠেছে তাঁর অভিনয়ে।

মধুমিতা সিনেমা হলে আগে কখনো সিনেমা দেখিনি। দুই তলায় ড্রেস সার্কেলে সিট। ৫৬ বছরের পুরোনো হল। না জানি কত স্মৃতি, ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। হলের পরিবেশ মোটামুটি ভালোই লাগল। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগল, আগের শো শেষ করে বের হওয়া দর্শকদের দেখে। হলভর্তি দর্শক, সারি দিয়ে একে একে বের হতে শুরু করলেন। সিটি, হইহুল্লোড়, সঙ্গে শুনতে পেলাম শাকিব খান, চঞ্চল চৌধুরী, রায়হান রাফী, মিমি, নাবিলাসহ সিনেমাসংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের প্রশংসা। সব মিলিয়ে উৎসব উৎসব পরিবেশ। সিনেমা দেখা ফিরতি দর্শকের এই আনন্দ দেখেই প্রশ্নটা মনে জেগে উঠল—সিনেমা হলে এমন আনন্দমুখর পরিবেশই কি আমাদের প্রত্যাশা নয়?

প্রশ্নটা মাথার মধ্যে নিয়েই হলে প্রবেশের লাইনে দাঁড়ালাম। ভেতরে গিয়ে সিট নম্বর খুঁজে বসার কিছু মুহূর্ত পরপর জাতীয় সংগীতের সুর বেজে উঠল। পাইরেসি যেন না হয়, পাশের সিটে বসে কেউ ক্যামেরা, মুঠোফোন দিয়ে ভিডিও করলে তাকে নিবৃত্ত করুন। শাকিব খানের এই ভিডিও বার্তার পর ‘তুফানি’ জোশে চিৎকারে ফেটে পড়ল গোটা হল।

আর কথা না বাড়িয়ে সিনেমা প্রসঙ্গে যাই। যুক্তি-তর্ক বা বিশ্লেষণ নয়, ব্যক্তিগত অনুভূতির কথাই বলার চেষ্টা করছি। তবে শুরুতে একটি প্রশ্ন খোলাসা করে নেওয়া দরকার। সিনেমা হলে গিয়ে কেন সিনেমা দেখি? নানা উৎপীড়নে ব্যতিব্যস্ত জীবন থেকে নিজেকে আড়াল করতেই যে নাটক-সিনেমার কাছে যাই, সিনেমা হলে যাই ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। আবার সিনেমাবেত্তা হওয়ার গোপন ইচ্ছাও নেই। আসলে চারপাশ থেকে সিটির ধ্বনি আসছে, কোলাহল, দর্শকের চিৎকার—সিনেমা হলের এ ব্যাপারগুলো আমাকে ভীষণভাবে রোমাঞ্চিত করে। ‘তুফান’ দেখার ইচ্ছাটা জন্মেছিল ‘লাগে উরাধুরা’ গানটি দেখে।

সিনেমা দেখার পর ভালো অনুভব করেছি। কেবল ‘লাগে উরাধুরা’ নয়, ‘তুফান’-এর প্রত্যেকটি গানই চিত্তাকর্ষক। ‘দুষ্টু কোকিল’ গানটি যখন চলছিল ওই মুহূর্তে হলে উপস্থিত দর্শকদের যে কলরব, উল্লাস; যে আবহ ওই মুহূর্তে তৈরি হয়েছিল, তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।

‘তুফান’ রায়হান রাফীর ছবিটি দেখার পর মনে মনে গর্ববোধ করেছি যে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরনের ছবির নির্মাণ শুরু হলো। পরিচালক এই ছবিতে নিজের মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। বোধ করি, বাইরের সিনেমা দেখে অভ্যস্ত কেউই এ কথা অস্বীকার করবেন না। তদুপরি দৃশ্যগুলোর বুনন এত ভালো যে ভিনদেশি কোনো মুভি দেখছি বলে ভ্রম হলেও বিষয়টা দোষের হবে না।

শাকিব খান চমৎকারভাবে ‘তুফান’ চরিত্রটিকে ধারণ করেছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কথা বলার ধরন, অঙ্গভঙ্গি থেকে প্রতিটি দৃশ্যায়নে মুহুর্মুহু ‘তুফানি’ জোশ ফুটে উঠেছে তাঁর অভিনয়ে।

নাবিলা, যাঁর সাবলীল বাচনভঙ্গি, মায়াময় চাহনি দেখে আনন্দিত হয়েছি। নাবিলা এত সহজ-সুন্দর, স্বাভাবিক ছিলেন যে তাঁর অভিনয় ক্রমে ক্রমে বাস্তব হয়ে উঠেছে। ফজলুর রহমান বাবু, মিশা সওদাগর প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ ও গুণী শিল্পী। তাঁদের অভিনয়ে প্রাণ ছিল। দেখে ভালো লেগেছে।

বিশেষ করে মুগ্ধ হয়েছি চঞ্চল চৌধুরীকে দেখে। নাটক, সিনেমায় সচরাচর যে চঞ্চল চৌধুরীকে দেখে অভ্যস্ত তিনি ভিন্নভাবে ‘তুফান’-এ উপস্থাপিত হয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, যে দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরীর আবির্ভাব, ওই দৃশ্য থেকেই গল্পের প্রতি আকর্ষণ বহুগুণে বেড়েছে। গুণী এ অভিনেতার চরিত্রটিই এমন যে সিনেমা দেখার পর মনে হয়েছে এই চঞ্চল চৌধুরী অন্য রকম। নিজেকে অন্য রকমভাবে উপস্থাপন করতেই যেন তিনি চরিত্রটিকে আপন করে নিয়েছেন।

মিমি চক্রবর্তী জনপ্রিয় শিল্পী। তাঁর অভিনয় দুই বাংলার দর্শকই উপভোগ করেন। এ সিনেমাতেও তাঁর অভিনয়ের সাবলীলতা দেখা গেছে।
গান, অভিনয়, সাউন্ড, চরিত্রের লুক, সেট ডিজাইন—সব মিলিয়ে ‘তুফান’-এর নির্মাণ অনবদ্য। তারপরও সব তো আর নিখুঁত হয় না। সিনেমার মতো সৃষ্টিশীল বিষয়েও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে সিনেমাটি হলে বসে দেখে তুমুল আনন্দ পেয়েছি। বেশি ভালো লাগা তৈরি হলে আকাঙ্ক্ষা বেশি থাকে। হয়তো সে কারণেই মনে হয়েছে, গল্পকে নির্মাতা যেভাবে এক সুতায় গেঁথেছেন, সেটা আরও একটু সহজ হলে বোধ হয় ভালো হতো।

তবে এটা সত্যি, হলে বসে আনন্দ নিয়ে দেখার ক্ষেত্রে ‘তুফান’-এর জুরি নেই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেই হলমাতানো অ্যাকশন ছবি নির্মাণ শুরু হয়েছে—এ কারণে আমরা গর্ব করতেই পারি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme