চীন, জাপানে প্রথম দিকে চা ছিল মূলত ঔষধ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যই তা পান করত মানুষ৷ চীনের সিচুয়ান প্রদেশের লোকেরা সর্বপ্রথম চা সেদ্ধ করে ঘন লিকার করে খেতে শেখে। ১৬১০ সালে পর্তুগিজদের হাত ধরে ইউরোপে ঢুকে পড়ে চা। ১৬৫০ সালে চীন বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু করে। পরে ১৭০০ সালে ব্রিটেনে জনপ্রিয়তা পায় চা। তাদের মাধ্যমেই ভারতীয় উপমহাদেশে চায়ের আগমন।
উনিশ শতকে টি ব্যাগের আগমন চায়ের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আরও সহজ হয়ে গেলো চা পান। টি ব্যাগ প্রথম কে আবিষ্কার করে, তা নিয়ে খানিকটা বিতর্ক আছে। জনপ্রিয় কিংবদন্তিগুলোর একটি হলো, ১৯০৮ সালে মার্কিন চা আমদানিকারক টমাস সুলিভান চা প্যাকেজিংয়ের ব্যয় কমানোর জন্য টিনের পাতের থেকে হালকা কিছুর সন্ধান করছিলেন। সুলিভান তাঁর চায়ের নমুনাগুলো সিল্কের তৈরি ছোট ব্যাগে প্যাকেজিং করে পাঠাতে শুরু করেন। কিছু গ্রাহক সিল্কের ব্যাগ সরাসরি গরম পানিতে দিয়ে চা তৈরি করা শুরু করে। বলা হয় এভাবেই আবিষ্কার হয় প্রথম টি ব্যাগ।
উনিশ শতকে টি ব্যাগের আগমন বাড়িয়ে দেয় চায়ের জনপ্রিয়তাছবি: পেক্সেলস
অবশ্য সুলিভানের ঘটনার সাত বছর আগেই ১৯০১ সালে রবার্টা সি লসন ও মেরি ম্যালারেন চা-পাতা হোল্ডারের পেটেন্ট নিয়েছিলেন। এই চা-পাতা হোল্ডারকেই আজকে আমরা টি ব্যাগ বলি। এই নারীরাই আধুনিক টি ব্যাগ আবিষ্কার করেন। তাঁরা এমন কাপড় বেছে নিয়েছিলেন, যার ভেতর দিয়ে পানি প্রবেশ করতে পারে। প্রতিটি ব্যাগে এক কাপ চা হওয়ার মতো পর্যাপ্ত পাতা থাকত। তাঁদের কাপড়ের তৈরি টি ব্যাগ দেখতে প্রায় এই সময়ের টি ব্যাগের মতোই।
পরবর্তী সময়টা ছিলো টি ব্যাগের গুণগত মান উন্নয়নের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাল। ১৯৩০ সালের ভেতরে সমস্ত ধরনের টি ব্যাগের ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছিল। টি ব্যাগ কাপড়ের সুতা দিয়ে তৈরি হতো। বিভিন্ন আকারের পাওয়া যেত, যেমন বৃত্তাকার, বর্গক্ষেত্র বা সাধারণ। এমনকি সেলোফোন দিয়েও টি ব্যাগ তৈরি হতো।
১৯৩০ সালে প্রথম কাগজের তৈরি টি ব্যাগ আবিষ্কার করেন বস্টন শহরের টেকনিক্যাল পেপারস কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম এ হারম্যানসন। টি ব্যাগ বাজারজাতকরণ শুরু হয় ১৯৫২ সালে টমাস লিপটনের হাত ধরে। তার কোম্পানি লিপটন প্রথম টি ব্যাগ বাজারে ছাড়ে। এই ব্যাগ থেকে চা বানানোর প্রক্রিয়া মানুষকে শেখাতেই প্রথম টি ব্যাগের গায়ে ব্যবহারবিধি ছাপায় লিপটন।