1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima

পালাবদলের এক মাস: এখনও থিতু হওয়ার অপেক্ষায় শিক্ষাঙ্গন

  • আপডেট : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য কমে এসেছে; পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে,” বলেন মাউশির সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশীদ।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের গণআন্দোলনের মাসে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে স্থবিরতা নেমেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এক মাসেও সেই স্থবিরতা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বিভিন্ন দপ্তর প্রধানদের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অনেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। নতুন করে এসব জায়গায় নিয়োগ শুরু হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের এখনও অনেক পদ শূন্য।

১৮ অগাস্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলকভাবে কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থিমিত হয়ে পড়া চাঞ্চল্য আর পঠন-পাঠনের স্বাভাবিক চিত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানর ‘নৈরাজ্য কমে এসেছে’। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

সংস্কারের প্রত্যয় নিয়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকার পরিবর্তন আনবে শিক্ষা ব্যবস্থাতেও। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের যে জাতীয় শিক্ষাক্রম চালু হয়েছিল, তা বাতিল করে ফিরিয়ে আনা হবে পুরনো শিক্ষাক্রম। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠন আর মূল্যায়ন পদ্ধতিও পাল্টে যাচ্ছে।

অভিভাবকহীন বিশ্ববিদ্যালয়

সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই পদত্যাগ করেছেন, যারা নিয়োগ পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

এরই মধ্যে শূন্য পদগুলো পূরণ করা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ হলেও এখনও ৩০টির মত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশীদ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আর্থিক যে কাজগুলো আছে, সেটা যেন চলে এটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যাকাডেমিক কাজ শুরু করতে গেলেও তো ভিসি লাগে। আমরা প্রক্রিয়ায় আছি, কত সময় লাগবে সেটা তো আগেভাগে বলা মুশকিল।
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দোলন পরে সরকার পতনের আন্দোলনের রূপ নেয়। দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতা আর প্রাণহানির হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর দুদিন পর ৮ অগাস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

সরকার পতনে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা একে একে সরে দাঁড়ান। দাবি-বিক্ষোভের মুখেও সরে যেতে বাধ্য হন অনেকে।

আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করা হয়। পরে ৮ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ করে।

দুদিন পর ১০ অগাস্ট উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালও পদত্যাগ করেন। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদ থেকে অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে অব্যাহতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনও পদত্যাগ করেছেন।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষও পদত্যাগ করেছেন।

১০ অগাস্ট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমানও।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ও অন্য শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবং প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। শিক্ষার্থীরা তাদের পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।সাদেকা হালিমের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকে এখনও উপাচার্য শূন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকেই উপাচার্য নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন।

গত ১৮ অগাস্ট পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আশা করি খুব দ্রুতই সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশা। কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। নিয়োগ পেয়েছেন নতুন প্রক্টরও।এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও পদত্যাগ, পরিবর্তন

ক্ষমতার পালাবদলের হাওয়ায় সরে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রধানরাও।

গত ১১ অগাস্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠান ইউজিসির চেয়ারম্যানের অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ। ১৯ অগাস্ট জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম। এর দুইদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ।

সরকার পতনের পর ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরসহ অন্য সদস্যরা অফিসে বসতে পারছিলেন না। তাদের পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী সমাজের ব্যানারে বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা কর্মসূচি পালন করেন।

এর মধ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন। ১১ অগাস্ট ইউজিসির সচিব হয়েছেন এ কমিশনের রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম। আগের সচিব ফেরদৌস জামানকে কমিশনের রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের পরিচালকের দায়িত্বে বসানো হয়েছে।

তার আগে ২৫ অগাস্ট মাউশির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান এবিএম রেজাউল করীম। ৩১ অগাস্ট এনসিটিবির চেয়ারম্যান হন অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান।

পদত্যাগ করতে জবরদস্তি

সরকার পতনের পর অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষককে পদত্যাগ করাতে চাপ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা জোর করে পদত্যাগপত্রে সই করিয়ে নেন।এমন ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্টের কথা বলছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অনেকে।

গত ২৮ অগাস্ট নওগাঁয় শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের চাপের মুখে পদত্যাগ করে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়।শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে নুরুল ইসলামের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। পরে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে বৈঠকে সমঝোতাও হয়। তবে সেই সমঝোতার পরদিন আবার একদল শিক্ষার্থী নুরুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগও ওঠে। চাপের মুখে তাকে পদত্যাগপত্রে সই করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তিনি বুকে চেপে ধরে শুয়ে পড়েন। পড়ে ধরাধরি করে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। গত ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলার যদুন্দী নবকাম পল্লী কলেজে এ ঘটনা ঘটে।একই দিনে কুমিল্লার মুরাদনগরে জোর করে এক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।তার আগে ২৪ অগাস্ট দুপুরে মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি ওঠে।

প্রতিষ্ঠানটির সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “এসব কারণে অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসতে দেয় না। ক্লাসে অর্ধেক আসে, অর্ধেক আসে না। পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় আমরাও পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছি না।”স্কুলটির চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, এসব কারণে সবাই ক্লাসে ফিরতে পারছে না ঠিকঠাক মত।

সরকার পতনের পর চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা। শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে অভিযোগ করে এর প্রতিকার চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কাছে ২১ অগাস্ট হোয়াটসঅ্যাপে চিঠি পাঠানোর কথা বলেছেন তিনি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষকদের পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়া এবং হেনস্তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।জোর করে পদত্যাগ করানো নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত ৩ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ ও নানাভাবে হেনস্থার ঘটনা ঘটছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।”তবে শিক্ষা উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পরও এমন ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, এসব নৈরাজ্য এখনও চললেও কমে এসেছে।

“স্থানীয় প্রশাসনের কাছেই তো সাহায্য চাইতে হয়, সেটা সকলকে অ্যালার্ট করে রেখেছি। তারা যদি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে শরণাপন্ন হয়, তাহলে ওখানে সুরাহা হতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে তো সব জায়গায় পৌঁছানো যায় না ওভাবে। আশা করা যায় কমে আসবে।”

পরিবর্তন আসছে শিক্ষা ব্যবস্থায়

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা ব্যবস্থাও আমূল পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। মাধ্যমিকে ফিরবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ। মূল্যায়ন পদ্ধতি অনেকটাই জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর মত হবে।

গত ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব রহিমা আক্তার স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ কথা জানানো হয়।মন্ত্রণালয় এখন বলছে, নানা সমস্যার কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’। এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বাঁধা হিসেবে শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাঠ্যক্রম সংশোধন ও পরিমার্জন করে ২০২৪ সাল থেকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আসবে।

মাধ্যমিকে ছয়টি করে বিষয়ভিত্তিক যে মূল্যায়ন কার্যক্রম অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে, সেগুলো আর হবে না বলেও জানানো হয়েছে। ২০২৬ সালের এসএসসি ও সমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে পরিপত্রে। ২০২৫ সালে যথাসম্ভব সংশোধন ও পরিমার্জন আনা হবে পাঠ্যবইয়ে।

এর আগে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ‘সংস্কারের হাওয়ায়’ নতুন শিক্ষাক্রম গুটিয়ে নিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার বার্তা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষাউপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তৈরি করা এ শিক্ষাক্রম ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’।তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, একটা অভ্যস্ততায় এসে তাদের সেখান থেকে ফিরতে কষ্ট হবে।

মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, “এটাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলাম; সেটা বদলে ফেলায় আমরা শঙ্কিত। আবার পুরনোটায় ফিরে যেতে হবে।”

আগের পাঠ্যক্রম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, “শিক্ষক, শিক্ষার্থী, দেশবাসী সকলের মধ্যেই এক ধরনের সংশয় ছিল, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও ছিল না, তড়িঘড়ি করে চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।”কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৮ জুলাই থেকে কয়েক দফায় স্থগিত করা হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সরকার পতনের আগে-পরে সহিংসতায় বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে গেলে পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

স্থগিত পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগে সচিবালয়ে একদল শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সেগুলো বাতিল করা হয়।

তবে আন্দোলন-সহিংসতার ধাক্কায় এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘অনভিপ্রেত’ বলেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme