বাঁধ মেরামতের সময় গর্তগুলো ভরাট করে মানুষকে তাদের বসতভিটা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সাম্প্রতিক বন্যায় কুমিল্লায় ভেঙে গিয়েছিল গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ। তাতে মুহূর্তের মধ্যেই পানিতে ভেসে যায় বুড়িচং উপজেলা। একে একে প্লাবিত হয় আশপাশের উপজেলা।এখন বন্যার পানি নেমে গেলে জেগে উঠতে শুরু করেছে ক্ষতচিহ্ন। যেখানে কিছুদিন আগেও ছিল মানুষের সাজানো-গোছানো সংসার। কিন্তু বর্তমানে গেলে মনেই হবে না- এখানে কয়েকদিন আগেও বাড়িঘর ছিল।উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় বেড়িবাঁধের সেই ভাঙা অংশ দেখলে এখনো ভয়ে আঁতকে উঠছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন- দ্রুত বাঁধটি নির্মাণ করা না হলে ভারত থেকে ফের ঢল এলে যেকোনো সময় প্লাবিত হতে পারে বুড়িচং।
সম্প্রতি বুড়বুড়িয়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেই ভাঙা বাঁধ এলাকায় তীব্র স্রোতের কারণে মাটি সরে গিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির কয়েকটি গর্ত এখন দৃশ্যমান। দেখলে মনে হবে পাশাপাশি বড় আকারের কয়েকটি পুকুর। সেসব গর্তে জমে থাকা পানি কোনো দিকেই যাচ্ছে না।ওই ভাঙা বাঁধের এলাকা দেখতে আসছেন বিভিন্ন স্থানের মানুষজন। বাঁধটি দেখতে এসে আঁতকে ওঠেছেন বলে জানান বুড়িচংয়ের আরাগ আনন্দপুর গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেন।তিনি বলেন, পানি কমেছে শুনে বাঁধটি দেখতে এসেছি। দেখেই ভয় লেগেছে। এই বাঁধ ভেঙে যাওয়া স্রোত যেন আরেকটি নদী তৈরি করেছে। দ্রুত বাঁধটি মেরামত করা না হলেও যেকোনো সময় আবার ঢলের পানি এলে এখান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকবে।
গত ২২ অগাস্ট গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কারণে রাত পৌনে ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় এই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। তীব্র স্রোতে বানের পানি প্রবেশের ফলে তলিয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বুড়িচং উপজেলার পর পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলাও পরবর্তী সময়ে পুরোপুরি প্লাবিত হয়ে যায়। এছাড়া এই ভাঙা বাঁধের পানি বুড়িচং হয়ে প্রবেশ করে দেবিদ্বারেও।পরে ২৭ অগাস্ট রাত থেকে গোমতীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামতে শুরু করে। তবে ভাঙা বাঁধ দিয়ে অনবরত পানির স্রোত যাচ্ছিল লোকালয়ে। প্রায় দশ দিন আগে নদীর পানির উচ্চতা লোকালয় থেকে নেমে গেলে উল্টো স্রোত বইতে শুরু করে।
এদিকে, পানি কমে আসায় দ্রুত ওই ভাঙা বাঁধটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। তাদের ভাষ্য, দ্রুত বাঁধটি নির্মাণ করা না হলে ভারত থেকে ফের ঢল এলে যেকোনো সময় প্লাবিত হতে পারে বুড়িচং। এমন শঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষের।বুড়বুড়িয়া এলাকায় ভাঙা থাকায় বেড়িবাঁধ সড়কটি দিয়েও ২২ অগাস্ট থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বেড়িবাঁধ সড়কটি দিয়ে কুমিল্লা শহর থেকে বুড়িচং সদর এবং কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের রামপুর এলাকায় চলাচল করা যেত সহজে। এখন দীর্ঘ পথ ঘুরে স্থানীয়দের চলাচল করতে হচ্ছে।
যেই স্থানে বাঁধটি ভেঙেছে- তার পাশের বাড়িটি গোলাম মোস্তফার। তীব্র স্রোতে নিজের দু’টি এবং তার ভাইয়ের একটি ঘর ভেসে গেছে।এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন জানিয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, “আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। সেদিন রাত থেকে গোমতীর বেড়িবাঁধের ওপর পরিবার নিয়ে থাকছি।
মাথার ওপরে ত্রিপল, বৃষ্টি হলেই ভিজে যাই। আমাদের সব শেষ হয়ে এখন আমরা নিঃস্ব।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, “আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভেসে গেছে বানের স্রোতে। বাঁধ লাগোয়া তিন-চারটি বাড়ির এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। সেখানে এখন বড় বড় পুকুর।বাঁধ মেরামতের সময় ওই গর্তগুলো ভরাট করে মানুষকে তাদের বসতভিটা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। না হলে এই বাড়িগুলোর অন্তত দশটি পরিবারকে রাস্তার মধ্যেই থাকতে হবে।এদিকে, গত শনিবার থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য জরিপের কাজ শুরু করছেন। শনিবার বুড়িচং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া হকের উপস্থিতিতে ওই জরিপ হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনিয়া হক বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বাঁধটির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে- সেটি নির্ণয় করেছেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করছি।
বর্তমানে ভাঙা বাঁধটি দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে না। এজন্য বাঁধ মেরামতের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে তারাই (পাউবো) ভালো বলতে পারবেন।পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন বলেন, “২২ অগাস্ট রাতে বাঁধটি যখন ভেঙেছিল তখন সেটি ছিল ৮/৯ মিটারের মতো। গত শনিবার সার্ভে করতে দেখতে পেয়েছি তীব্র স্রোতে নদীর পানি প্রবেশ করায় এই বাঁধটির ভাঙনের পরিমাণ এখন ১১০ মিটার বা ৩৬০ ফুটের বেশি। শুধু বাঁধই নয়, পানির তীব্র স্রোতে বেড়িবাঁধের দুইপাশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা বাঁধটির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং মেরামতে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে সেটি নির্ণয় করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেব। এরপর বরাদ্দ এলে মেরামত কাজ শুরু হবে।