সাইমুনের বাবা ইউনুস কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “তারা আমার বুকের ধনকে কেড়ে নিয়েছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।”চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত এক মাদরাসা ছাত্র চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।এই সংঘর্ষের ঘটনায় ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক করা হয়েছে দুই জনকে।
শুক্রবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত কিশোর শনিবার রাত ৮টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।নিহত সাইমুন (১৪) হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র। তার বাবা মো. ইউনুস পেশায় একজন রাজ মিস্ত্রি। তাদের বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চরবাকিলা গ্রামে। তারা হাজীগঞ্জ মিঠানিয়া ব্রিজ সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।সাইমুনের বাবা ইউনুস কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “সাইমুন আমার একমাত্র ছেলে। শুক্রবার সে একটি কাজে হাজীগঞ্জ বাজারে গিয়েছিল। সেখানে বড় মসজিদে এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার জন্য সাধনা ওষুধালায়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।“এ সময় সে মারামারির মধ্যে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় সাইমুন। অজ্ঞাতরা তাকে ওই অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয় কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে হাজীগঞ্জ মুন হসপিটালে নিয়ে যায়।
“সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় রেফার করা হয়। কুমিল্লায় তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে শনিবার দুপুরে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাতে সাইমুন মারা যায়। ”তিনি বলেন, “তারা আমার বুকের ধনকে কেড়ে নিয়েছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।”এদিকে হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার থানায় মামলা করেছেন পৌর এলাকার টোরাগড় গ্রামের পারভেজের স্ত্রী তুহিন বেগম। আসামি করা হয়েছে ৪০০ জনকে।মামলার পর পরই সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে মোহাম্মদ রিফাত (১৯) ও মো. ইমরান হোসেন (২৩) নামে দুই যুবক আটক হয়েছে।রিফাত উপজেলার পশ্চিম গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়নের জমাদার বাড়ির মীর হোসেনের ছেলে এবং ইমরান উপজেলার সেন্দ্রা গ্রামের গাজী বাড়ীর শুকুর আলীর ছেলে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে স্থানীয় দুই গ্রাম মকিমাবাদ-টোরাগড়ের বিএনপির দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হাজীগঞ্জ বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বাজারের কয়েকটি মার্কেটও ভাঙচুর করা হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। তারা হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।এদিকে দুদিনের সংঘর্ষের পরই বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, পৌর বিএনপির অধীনস্থ সব কমিটি । বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।এছাড়া উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলেরও সব ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করেছে সংগঠনগুলির কেন্দ্রীয় কমিটি।ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত বাকি সন্দেহভাজনদের ধরতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত আছে।