1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima
শিরোনাম :
সিরিয়ায় ‘চোরাগোপ্তা’ হামলায় ১৪ পুলিশ নিহত ৪২ ঘণ্টা পর রাঙামাটির নদীতে মিলল নিখোঁজ ২ পর্যটকের লাশ নাশকতা কি না, তদন্তের পর বলা যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পাহাড়ে ত্রিপুরা পাড়ায় পুড়েছে ১৭ ঘর, বাসিন্দারা ছিলেন বড়দিনের উৎসবে গণপিটুনি দিয়ে চুন-বালু মেশানো এসিড পানি খাওয়ানো হয় যুবককে, পরে মৃত্যু ছাত্রদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে আল্লাহর ওয়াস্তে দুর্নীতি-চাঁদাবাজি থেকে সরে আসুন: আসিফ মাহমুদ যাদুকাটায় পাথর-বালু উত্তোলন, ১৭ শেইভ মেশিন জব্দ জাহাজে ৭ খুন: একমাত্র উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে দিশেহারা সালাউদ্দিন-আমিনুলের পরিবার বিশ্বশান্তি কামনা বড়দিনের প্রার্থনায়

মেঘনার জাহাজে ৭ খুন: ডাকাতি নয়, ‘ভিন্ন কিছু’ দেখছে পুলিশ

  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

“ডাকাতি হলে তো মালামাল নিয়ে যেত। কিন্তু কোনো কিছু খোয়া যায়নি। এমনকি যারা খুন হয়েছেন, তাদের মোবাইল ও মানিব্যাগও পাওয়া গেছে।”

চাঁদপুরের মেঘনায় সারবাহী জাহাজে সাত খুনের ঘটনাকে ‘ডাকাতি’ হিসেবে দেখছে না পুলিশ; সারসহ কোনো কিছু খোয়া না যাওয়ায় কিছুটা রহস্য তৈরি হয়েছে এ ঘটনায়।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রাথমিক তদন্তে নেমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এর পেছনে ‘ভিন্ন কোনো’ কারণ থাকতে পারে।

তারা বলছেন, শুধু লুটপাটের জন্য গলা কেটে একসঙ্গে এতগুলো মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা অস্বাভাবিক।

সোমবার লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন চাঁদপুর নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন।

রাতে এক প্রশ্নের জবাবে মুশফিকুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটি প্রাথমিকভাবে ডাকাতি বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, ডাকাতি হলে তো মালামাল নিয়ে যেত। কিন্তু কোনো কিছু খোয়া যায়নি। এমনকি যারা খুন হয়েছেন, তাদের মোবাইল ও মানিব্যাগও পাওয়া গেছে।

“যারা কর্মচারী তারা দরিদ্র মানুষ। তাদের কাছে খুব বেশি টাকা-পয়সা থাকার কথা না। জাহাজের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস হচ্ছে সার। সেই সার যেভাবে ছিল, সেভাবেই আছে। অনেক সময় জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, সেটিও ঘটেনি। জাহাজের তো অনেক দাম। ”তাহলে কী কারণে খুনিরা জাহাজে এসেছিল এমন প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, “দেখুন, এটা একটা নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। ডাকাতির ব্যাপারে সাধারণ যে ধারণা, সেটা এখানে হয়নি। প্রতিটি কক্ষে কক্ষে ঢুকে প্রত্যেককে মাথায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। কারো গলা কেটেছে। সাধারণ ডাকাত হলে তো, মালামাল নিয়ে চলে যেত।“হতে পারে, যে আগে থেকে কোনো শত্রুতা ছিল, সেই শত্রুতাবশত এই ঘটনা ঘটেছে। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বও হতে পারে। তবে, যাই কিছু হোক, তদন্ত করে প্রকৃত বিষয় জানা যাবে। তার আগে, সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে, এটা ডাকাতি মনে হচ্ছে না।”

সোমবার বিকালে হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা নদীতে আল বাখেরা জাহাজ থেকে পাঁচটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় গুরুতর আহত আরো তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতরা হলেন- জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া, ইঞ্জিন চালক সালাউদ্দিন, সুকানি আমিনুল মুন্সি, গ্রিজার সজিবুল, আজিজুল ও মাজেদুল ইসলাম। একজনের নাম জানা যায়নি।

গুরুতর অবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে জুয়েল রানা (২৩) নামে এক সুকানিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার শ্বাসনালী কেটে গেছে। তিনি শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান বলেন, “এখানে আমরা মোট আটজনকে পেয়েছি। এর মধ্যে পাঁচজন মৃত ছিল। তিনজনকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বাকি একজনকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে তার একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেটা সফল হয়েছে।”

তবে জুয়েলের কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। যেহেতু তার শ্বাসনালী কেটে গেছে ফলে তিনি কথা বলতে পারছেন না। তবে তিনি কাগজে নিজের নাম এবং জাহাজে তারা আটজন ছিলেন সেটা লিখে পুলিশকে জানিয়েছেন।

জুয়েল রানা একটু সুস্থ হলেই পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কর্মকর্তা আতাউল করিম রঞ্জু বলেন, ইউরিয়া সার বোঝাই করে জাহাজটি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে বিসিআইসির ডিপোতে যাবার কথা ছিল।

মালিক ফোনে জাহাজের কাউকে পাননি, অন্যরা গিয়ে দেখেন রক্তমাখা লাশ

জাহাজে সাত খুন: রাত ৮টার পরও সব ‘ঠিকঠাক ছিল’

মেঘনার সেই জাহাজের সুকানির শ্বাসনালী কাটা, ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি

জাহাজে সাত খুন: তদন্ত কমিটি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পর চাঁদপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “আহত একজন হাতের ইশারায় জানিয়েছেন, জাহাজে তারা আটজন ছিলেন। ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

“ডাকাতি কিংবা অন্য কোনো কারণে হতে পারে। তদন্ত করার পরে জানা যাবে। নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে কথা বলেছি। কারণ এই রুটে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করে।”

ফোনে জাহাজের কাউকে পাননি মালিক

আল বাখেরা জাহাজের সঙ্গে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল মালিকের। পরে একই মালিকের অন্য জাহাজের লোকজনদের খোঁজ নিতে বললে তারা গিয়ে আল বাখেরার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।

একই কোম্পানির মুগনি-৩ জাহাজের গ্রিজার মো. মাসুদ বলেন, “মালিক ওই জাহাজের কাউকে ফোনে না পেয়ে আমাদের জাহাজে ফোন দিয়ে খোঁজ নিতে বলেন।”

মাস্টার বাচ্চু মিয়া বলেন, “আমরা খালি জাহাজ নিয়ে মাওয়া থেকে ওই পথে ফিরছিলাম। মালিক শিপন মিয়া ফোন পেয়ে নোঙর করা আল বাখেরা জাহাজের কাছে গিয়ে রক্তাক্ত বেশ কয়েকটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে ৯৯৯ এ ফোন দেন।”

সুকানির শ্বাসনালী কাটা

জাহাজ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় যে তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়, তাদের মধ্যে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

চাঁদপুর নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মুশফিকুর বলেন, গুরুতর অবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে বাকি একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

গুরুতর আহত ওই কর্মচারীর নাম জুয়েল রানা (২৩)। তিনি জাহাজের সুকানি। ফরিদপুর সদর উপজেলার সেকেন খালাসির ছেলে তিনি। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

তাকে রাত ৯টায় ভর্তি করা হয় জানিয়ে বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা সিরাজ সালেক বলেন, “ওই যুবকের শ্বাসনালী কেটে গেছে। প্রাথমিকভাবে আর্টিফিশিয়াল একটি টিউব বসানো হয়েছে। এ মুহূর্তে তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।”

শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন যুগ্ম সচিব।

“কমিটিকে হত্যাকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়, দায়দায়িত্ব নিরূপণ, অনুরূপ নৌদুর্ঘটনা রোধে ভবিষ্যতে করণীয় ও প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ জন্য সময় দেওয়া হয়েছে পাঁচ কর্মদিবস।”

সব ‘ঠিকঠাক ছিল’ রাত ৮টার পরও

মালিকপক্ষ বলছে, জাহাজটি কর্মরতদের সঙ্গে রোববার রাত ৮টার পর তাদের সবশেষ যোগাযোগ হয়। তাদের ভাষ্য, সোমবার সকাল থেকে জাহাজটির কারও সঙ্গে তারা যোগোযোগ করতে পারছিলেন না। পরে আরেকটি জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করে আল বাখেরার খোঁজ মেলে।

জাহাজটির মালিক মাহবুব মোরশেদ বিপলু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রোববার রাত ৮টার পর জাহাজের মাস্টারের সঙ্গে শেষবার কথা হয়। তখনও সব ঠিক ছিল।

“ওই সময় জাহাজটি চাঁদপুরের হজারিয়ার কাছাকাছি নদীতে ছিল। প্রতিদিনই আমি বা আমাদের প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সোমবার সকাল থেকে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। এ নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme