কেমন চলছে ব্যাংক খাত। ঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক করে দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানানো শুরু করেছেন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: ঋণের সুদহার মাত্রই বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। অর্থনীতিতে যে সমস্যা চলছে, তা কাটাতে এর বিকল্প ছিল না। সুদহার আগেই সাড়ে ১৩ শতাংশে উঠেছিল, এখন ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। তবে আমরা এখনো ঋণের সুদ সাড়ে ১৩ শতাংশের মধ্যেই রেখেছি। এর চেয়ে ১ শতাংশ কম বা বেশি হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, শিল্পের কাঁচামালের জন্য মেয়াদি ঋণ, কৃষি ও এসএমই খাতে সুদহার কমিয়ে রাখতে। তাহলে সুদহার বাড়লেও কোনো সমস্যা নেই। আসলে ঋণের সুদ বেশি হলেও শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে কোনো সমস্যা হয় না। ২০১৮ সালে সুদ ১৮ শতাংশে উঠেছিল। তারপরও তখন ভালো শিল্পায়ন হয়েছিল। চাহিদামতো অর্থায়ন করতে পারলেই উন্নয়ন হয়। আমাদের দেশটা আমদানিনির্ভর। রপ্তানির বড় অংশ পোশাক খাতে। এখন আমরা কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে পারলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। এ জন্য কৃষিঋণ বাড়াতে হবে। আমরা এনজিওর মাধ্যমে কৃষিঋণ দিয়ে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হচ্ছে, আদায়ও ভালো হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে ডলার–সংকট চলছে। এ সংকট কবে নাগাদ কাটতে পারে বলে মনে করছেন?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: ডলার–সংকট অনেকটা কেটে গেছে। আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যে এ সংকট কেটে যেতে পারে। সেটি সম্ভব হবে যদি প্রবাসী আয় বাড়ানো যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের যে দূতাবাসগুলো আছে, সেখানে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে যাঁরা বৈধ চ্যানেলে দেশে অর্থ পাঠান, তাঁদের প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে। এতে সবাই বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। দূতাবাসগুলোকে এ জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিবেশী অনেক দেশ ভালো পরিমাণে প্রবাসী আয় পাচ্ছে। তাদের দেশে ডলারের নির্দিষ্ট দাম নেই, আবার হুন্ডি–ব্যবস্থাও নেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি হুন্ডি–ব্যবস্থা বন্ধের।
সম্প্রতি ১০টি ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে গ্রাহকের আস্থায় ঘাটতি দেখা দিল। উদ্যোগটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। সারা বিশ্বে এমন ব্যবস্থা চালু আছে। ব্যাংক খাতের উন্নয়নে এর বিকল্প আর কি ছিল। ভয়ে অনেক আমানতকারী কিছু ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিলেও তাতে বড় কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। মানুষ টাকা তুলে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে রাখবে। বাসাবাড়িতে কেউ বেশি দিন টাকা রাখেন না। আমরা দেখছি, গত কয়েক মাসে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আমানত বাড়ছে। ২০২২ সালের তুলনায় গত বছরে আমাদের ব্যাংকের আমানতে প্রায় ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
২৫ বছর পূর্ণ করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। এর মধ্যে আপনাদের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী আধুনিক সেবা–নির্ভর মার্কেন্টাইল ব্যাংক ‘বাংলার ব্যাংক’ হিসেবে দীর্ঘ ২৫ বছর অত্যন্ত সুনাম ও আস্থার সঙ্গে গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করে আসছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ও ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। গত বছর নিট মুনাফা হয়েছে ২০২ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকের আমদানি, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বেড়েছে। আমি আশাবাদী ২০২৪ সালেও একইভাবে প্রতিটি আর্থিক সূচকে সাফল্য আসবে।
আগামী দিনগুলোতে আপনাদের ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় সর্বাধুনিক ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সর্বদা সচেষ্ট। এ জন্য দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বড় শিল্পের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষি, রিটেইল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন প্রধান লক্ষ্যগুলোর অন্যতম খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করা। প্রান্তিক এলাকায় নতুন নতুন উপশাখা ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা। এ ছাড়া আর্থিক খাতে বিদ্যমান ঝুঁকি মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে ব্যাংক তহবিল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা সহজীকরণ করাও অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।