ভিক্টোরিয়া ডেগতারেভা (৩৫) জন্মসূত্রে রাশিয়ান হলেও হৃদয়ে এখন একটুকরো বাংলাদেশ। পেশায় তিনি একজন রূপবিশারদ (বিউটিশিয়ান)। গত ১২ বছর ধরে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ভ্রমণ ও বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি জানার আগ্রহ তাঁকে নিয়ে এসেছে সুদূর বাংলাদেশে। উদ্দেশ্য? শুধু বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠান দেখা ও উপভোগ করা!
গত ৭ এপ্রিল একাই বাংলাদেশে আসেন ভিক্টোরিয়া। পরে সহকর্মী তনিমা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলে যান পাবনায়, যেখানে তনিমার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে। সেই থেকে তিনি বিয়েবাড়ির প্রতিটি আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিচ্ছেন পুরো মন দিয়ে—গায়েহলুদ, বিয়েবাড়ির নাচ-গান, বরবরণ, বৌভাত—কোনো কিছু বাদ দেননি।
ভিক্টোরিয়ার সাজসজ্জা, হাসিমুখ আর প্রাণবন্ত আচরণ অতিথিদের নজর কেড়েছে। প্রতিদিন পরেছেন রঙিন শাড়ি। কখনো হাতে বরণডালা, কখনো মঞ্চের পাশে নাচে মাতাচ্ছেন ছোট-বড় সবাইকে। খেয়েছেন খাঁটি বাঙালি খাবার—তাঁর প্রিয় হয়ে উঠেছে খিচুড়ি।
তিনি বলেন, “রাশিয়ায়ও বিয়েতে গেট ধরা হয়, তবে এখানে সবাই মিলে যে উৎসব করে, তা একেবারেই অন্যরকম।”
বাংলাদেশি সংস্কৃতির রঙিনতা, মানুষের মিলেমিশে আনন্দ করার প্রবণতা তাঁকে অভিভূত করেছে। বিশেষ করে মেয়েদের শাড়ি পরা, গায়েহলুদের হলুদের রঙে রঙিন হয়ে যাওয়া, এইসব অভিজ্ঞতা তাঁর কাছে ছিল একদম নতুন।
তনিমা ইসলাম জানান, “প্রথমে ভিক্টোরিয়া আসার খবরে চিন্তিত ছিলাম, বিশেষ করে খাবার নিয়ে। কিন্তু এখন দেখি, সে সবাইয়ের সঙ্গে খাচ্ছে, এমনকি হাত দিয়েও! যেন আমাদের পরিবারেরই একজন।”
বিয়ের বর তানভির ইসলাম বলেন, “ভিক্টোরিয়ার উপস্থিতি আমাদের অনুষ্ঠানে বাড়তি প্রাণ এনেছে। সবাই তার সঙ্গে ছবি তুলছে, সে হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলছে। মনে হচ্ছে, সে আমাদের বহুদিনের চেনা।”
এখনই দেশে ফেরার কথা ছিল ভিক্টোরিয়ার। কিন্তু ১৪ এপ্রিলের বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান শুনেই তিনি সিদ্ধান্ত বদলেছেন। বলেছেন, “পয়লা বৈশাখ না দেখে গেলে তো কিছুই দেখা হলো না!”
ভিক্টোরিয়ার এই আন্তরিকতা ও সংস্কৃতিপ্রীতি প্রমাণ করে, আনন্দ আর ভালোবাসা কোনো ভৌগোলিক সীমানা মানে না। তিনি এখন শুধুই অতিথি নন, হয়ে উঠেছেন বিয়েবাড়ির অন্যতম তারকা।