আবার বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। একদিনে ৩ জনের মৃত্যুরও খবর এসেছে। ডেঙ্গুজ্বর একধরনের ভাইরাস দিয়ে হয়। এর অপর নাম ‘ব্রেকবোন ফিভার’। কারণ ডেঙ্গুজ্বরে প্রচুন্ড শরীর ব্যথা হয় যা হাড় ভাঙ্গা ব্যথার মত তীব্র। আমাদের দেশে বৃষ্টির এই সময়টায় এর প্রাদুর্ভাব বেশী হয়।
এডিস জাতীয় মশা এর বাহক তাই এর কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। প্রধানত এডিস এজিপ্টি মশা দিয়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস চার প্রকারের। একধরনের ভাইরাস দিয়ে সংক্রমন হলে সে ভাইরাস দিয়ে আর ভবিষ্যতে ডেঙ্গু হবে না। তবে তার যদি অন্য প্রকার ভাইরাস দিয়ে পরবর্তীতে ডেঙ্গুজ্বর হয় তা খুব মারাত্মক হতে পারে। এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশে ডেঙ্গুজ্বরের কোন ভ্যাকসিন নেই। একমাত্র মশার কামড় প্রতিরোধ করতে পারলেই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ সম্ভব।
উপসর্গঃ
প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুজ্বরের কোন উপসর্গ থাকে না। জ্বরসহ সামান্য কিছু উপসর্গ থাকে প্রথম দিকে। কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গুজ্বর জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আক্রান্ত মশা কামড়ানোর ৩-১৫ দিনের মধ্যে রোগ লক্ষণ দেখা যায়। সারা অঙ্গে তীব্র ব্যথা হয়, মাথা ব্যথা, বমি, বমিভাব, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, কাঁপুনি, শীতলাগা, গায়ে র্যাশ হওয়া, অস্বস্তি, দুর্বলতা ইত্যাদি উপসর্গ ডেঙ্গুজ্বরে দেখা যায়। সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে তেমন বড় কোন সমস্যা হয়না। তবে ডেঙ্গু হেমেরেজিক জ্বর খুব জটিল। এক্ষেত্রে উপরোক্ত উপসর্গ তো থাকেই তার সাথে হেমাটোক্রিট খুব বেড়ে যায় বা শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, পায়খানার সাথে, কাশির সাথে, মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর থেকে লিভার ও কিডনি ফেইলিউর হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে বিপদজনক অবস্থা হচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের উপসর্গের সাথে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে রোগী শকে চলে যায়। চিকিৎসা না করলে রোগী দ্রুত মৃত্যুবরণ করতে পারে। এ সময় রক্তচাপ কমে যায়, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়, নাড়ীর গতি দুর্বল ও দ্রুত হয়, রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পরীক্ষা নিরীক্ষা ঃচিকিৎসকগন লক্ষণ দেখে এবং শারীরিক পরীক্ষা করে ডেঙ্গুজ্বরের ধারণা পান। ল্যাব টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়া যায়। সিবিসি, এনএন১, আইজি এম, আইজি জি এবং প্লাটিলেট কাউন্ট করলে ডেঙ্গুজ্বর বোঝা যায়। তবে জ্বরের ৪-৫ দিন পর আইজি এম পরীক্ষা করা উচিত, আর প্রথম দিকে করতে হবে এনএস১। কারণ প্রথমদিকে আইজি এম রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকে। ডেঙ্গুজ্বরে প্লাটিলেট বা থ্রম্বসাইট অনেক কমে যায়। এছাড়া এন্টি ডেঙ্গু এন্টিবডি পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে রেগে নির্ণয় করা যায়। এছাড়া অন্যান্য অসুখের থেকে আলাদা করার জন্য কিছু ল্যাবটেস্ট চিকিৎসকরা করে থাকেন।
চিকিৎসাঃ ডেঙ্গুজ্বরের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামলই যথেষ্ট। কখনই অন্য এনএসএইড যেমন ইন্ডোমেথাসিন, অ্যাসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখা উচিত। প্রচুর পরিরমানে পানি, শরবত, স্যালাইন, ডাবের পানি খেতে হবে। মুখে খেতে না পারলে প্রয়োজনে শিরায় স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। প্লাটিলেট কাউন্ট যদি ১০,০০০ এর কমে যায় তবে প্লাটিলেই ট্রান্সফিউশন করতে হবে। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ না ব্যবহার করাই ভাল যদিও ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে স্টেরয়েড দেয়া হয়।
ডেঙ্গু জ্বরের কোন ভ্যাকসিন নেই। তাই প্রতিরোধ একটু কঠিন। তবে মশার বংশ ধ্বংসের মাধ্যমে অনেকটাই এর প্রতিরোধ সম্ভব।