আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিশেষ মতবিনিময় সভায় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি
পাহাড়ে সংঘাতের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া সহিংতা তদন্তে শিগগির একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শনিবার রাঙামাটির পর খাগড়াছড়িতে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা বলেন, “যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে, যা আগামীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।”এদিন বিকালে খাগড়াছড়িতে ডিসির সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিশেষ মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ছিলেন।
সভায় কিছু ‘দুস্কৃতকারীর’ উস্কানিতে পাহাড়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর অপচেষ্টা করছে তারা।”‘গুজবে কান দিয়ে’ কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন, সে বিষয়ে সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে পার্বত্য দুই জেলায় সংঘাত, সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার পর সকালে রাঙামাটিতে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তিন উপদেষ্টা।সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করা হলে ‘হাত ভেঙে’ দেওয়ার হুঁশিয়ার দেন তিনি।জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে দেওয়া যাবে না। যারা পরিস্থিতি অবনতি করার চেষ্টা করবে তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে।”বুধবার সকালে চুরির অভিযোগে ‘গণপিটুনিতে’ মামুন নামে এক যুবক হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা।এ বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। পরে লারমা স্কয়ারের দোকানপাটে আগুন দেয় একটি পক্ষ। তাতে ৬০ থেকে ৭০টি দোকান পুড়ে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ।
সংঘর্ষে সময় আহতদের খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়।দীঘিনালার ওই ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পুরো জেলায় আতঙ্ক তৈরি হয়। নাশকতা রোধে খাগড়াছড়ি পৌর শহর ও জেলা সদরে শুক্রবার বেলা ২টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।খাগড়াছড়ির সংঘাতের জেরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে আরেক পার্বত্য শহর রাঙামাটিতেও। সেখানে সংঘর্ষে একজন মারা যান। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।সেখানেও শুক্রবার সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পর বেলা দেড়টা থেকে রাঙামাটি পৌর এলাকায়ও ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শনিবার এ দুই পার্বত্য জেলা সফর করছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও এএফ হাসান আরিফ।রাঙামাটিতে সভা শেষে তারা খাগড়াছড়িতে যান। সেখানে ডিসির সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিশেষ সভায় সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া হামলায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও আহতদের উন্নত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।সভায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান বলেন, “একটি তুচ্ছ ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে বড় সহিংতায় রূপান্তর করা হয়েছে। কেউ চুরি করলে তাকে বিচার বহিঃর্ভূতভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলাও অনেক বড় অপরাধ।”তবে যাই ঘটুক না কেন, পাহাড়ে সকল সম্প্রদায় যেন একসঙ্গে একই ছাতার নিচে থাকতে পারে সেই বিষয়ে পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “উসকানি ও গুজবের ফাঁদে পা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেতনা যেন ম্লান না হয়। আর এর জন্য পাহাড়ি-বাঙালি সবাইকে ভ্রাতৃত্বসূলভ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সাম্প্রতিক সহিংসতায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।”