বর্তমানে কনের সাজ পার্লারেই করা হয়। কিন্তু যারা পার্লারে যেতে চান না বা যাওয়া পছন্দ করেন না অথবা অর্থনৈতিক দিকটা চিন্তা করে থাকেন, তারা বাড়িতেই কনে সাজতে পারেন। কিন্তু কেমন মেকআপে, কেমন হেয়ার স্টাইলে কনের রূপ খুলবে তা বুঝে উঠতে পারেন না। তাই এ বিষয়ে সঠিক কিছু পরামর্শ দেয়া হলো যা অনুসরণ করে সহজেই কনের সাজে হয়ে উঠতে পারেন অপরূপা, আকর্ষণীয়া, তিলোত্তমা। প্রধানত প্রত্যেক কনের চেহারা, উচ্চতা, রঙের সঙ্গে মানানসই মেকআপ তো বটেই, হাল ফ্যাশনের মেকআপ বিষয়ে জানা প্রয়োজন। চুল বিয়ের বিকেলে সাজতে বসে প্রথমে চুলের সজ্জা। ঠিকঠাক চুলের বিন্যাস বদলে দিতে পারে মুখশ্রী। মুখের আকৃতি অনুযায়ী চুল ব্যাক ব্রাশ বা ফাঁপিয়ে নিয়ে ক্লিপ করতে হবে।
যাদের মুখ গোলকার তাদের চুলের সামনের দিক ফাঁপিয়ে নিয়ে ঘাড়ের কাছে খোঁপা করতে হবে। লম্বা মুখের ক্ষেত্রে চুলের দুটো পাশ ফাঁপিয়ে নিয়ে খোঁপা করা ভাল। খোঁপা নানাভাবে বাঁধা যায়। রোলার লাগিয়ে বা ঘাড়ের কাছে হাত খোঁপাও করা চলে। শরীরের উচ্চতা কম হলে মাথার উপরের দিকে খোঁপা করলে উচ্চতা বেশি মনে হবে। আবার লম্বা মেয়েদের ক্ষেত্রে ঘাড় খোঁপাই ভাল মানাবে, খোঁপায় বিভিন্ন ধরনের হেয়ার এ্যাক্সেসরিজের ব্যবহার চুলের সাজে নতুন মাত্রা এনেছে এখন। খোঁপা বেঁধে তাকে ওড়না বা ঘোমটা দিয়ে ঢেকে না রেখে নানা ধরনের ডিজাইনার কাঁটা, ক্লিপ, স্টোন-সেটিং-ক্লিপ, বিভিন্ন রঙের স্টোন বা পুঁতি, কৃত্রিম ফুল ইত্যাদি দিয়ে সাজালে দারুণ লাগে। প্রয়োজনে এর ওপর স্বচ্ছ ওড়না দেওয়া যায় আর যদি এসব দিতে না চান তাহলে সনাতন পদ্ধতিতে তাজা ফুলের গোড়ে মালায় ডেকে দিন খোঁপা। সৌন্দর্য এবং সৌরভ দুই-ই ঘিরে রাখবে কনেকে। মেকআপ মেকআপ শুরুর আগে মুখ, গলা, ঘাড়, পিঠে ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনার লাগিয়ে নিতে হবে।
মেকআপ শুরুর আগে দেখতে হবে কোথায় খুঁত বা দাগ রয়েছে। খুঁত ঢাকতে হবে কভার স্টিক দিয়ে। এরপর ফাউন্ডেশনের পালা। ত্বকের রঙ অনুযায়ী ফাউন্ডেশন অল্প পানি দিয়ে ত্বকের সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে। পানি স্প্রে করে নিতে হবে মুখে, গলায়। এতে মেকআপ সুন্দরভাবে বসে যাবে। যাদের নাক চাপা তারা এক শেড ডার্ক ফাউন্ডেশন নাকের দু’পাশে লাগিয়ে নিলে নাকটি উঁচু লাগবে। এর ওপর কমপ্যাক্ট লাগিয়ে দিলে বেস মেকআপ শেষ। গালে থাকবে ব্লাশারের লালিমা। লাল, মেরুন, ব্রাউন পিংক শেডের ব্লাশ অন শাড়ির সঙ্গে মানানসই করে লাগালে কনের মুখে লাজুক ভাবটি ফুটে ওঠে। চিক বোন শিমার দিয়ে হাইলাইট করতে হবে। শরীরের সুন্দরতম অঙ্গ চোখের সাজই কনের আসল রহস্য। চোখ ছোট হলে মোটা করে, চোখ বড় হলে সরু করে আই লাইনারের রেখা টানতে হবে। চোখ যদি বসা হয় কাজল দিয়ে ভরিয়ে দিতে হবে চোখের কোল। এক্ষেত্রে আই লাইনার কম ব্যবহার করলে ভাল। অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাজল একটু চোখের নিচের পাতায় একটু সাজ করে দিলে চোখে মায়াবী ভাব ফুটবে। চোখের পাতা ঘন দেখাতে প্রথমে সাদা মাসকারা, শুকিয়ে গেলে ওয়াটার প্রুফ কালো মাসকারা ব্যবহার করতে হয়। তাই শ্যাডো অবশ্যই শাড়ি বা পোশাকের রঙের সঙ্গে মিশিয়ে লাগাতে হয়। সঙ্গে গোল্ড, সিলভার বা কপার দিয়ে হাইলাইট করতে হবে। অনেক সময় দুটি বা তিনটি রঙ মিশিয়েও শ্যাডো লাগালেও ভাল লাগবে। যারা একটু ন্যাচারাল লুক পছন্দ করেন তাদের জন্য ব্রাউন বা কপার
সাদা অভিজাত একটি রঙ। সাদার বড় সুবিধা হলো এটি যেকোনো রঙের সঙ্গেই মানিয়ে যায়। তবে কখন কোন রং বেছে নেবেন তা নির্ভর করবে ঋতু, সময় ও পরিবেশের ওপর। যেমন প্রকৃতিতে রঙের উপস্থিতি কম হলে সাদা পোশাকের সঙ্গে সাজটা হওয়া চাই অনেক বেশি উজ্জ্বল। দিনের বেলায় কোনো দাওয়াতে অথবা যেকোনো সময়েই আনুষ্ঠানিক পরিবেশে সাদা পোশাক পরলে তার সঙ্গে মেরুন, বাদামি, গোলাপি অথবা কফি রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতের বেলায় সাজে জমকালো ভাব আনতে লাল, ম্যাজেন্টা, কমলার মতো গাঢ় রং বেছে নিতে পারেন। সাদা পোশাকের সঙ্গে চোখের সাজটা হালকা রাখুন। চোখে নীল, আকাশি ও সবুজ রঙের শেড ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা শুধু লাইনার, কাজল, ঘন মাশকারা এবং ন্যুড রঙের আইশ্যাডো দিয়েও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। হোয়াইট স্মোকি মেকআপেও ভালো লাগবে। চোখের নিচে সাদা, গোলাপি, সবুজ এ ধরনের রংগুলো ব্লেন্ড করে দিলেও দেখতে সুন্দর লাগবে, বললেন তিনি। চোখে কালো ও সাদাটে দুই ধরনের স্মোকি মেকআপেই মানাবে, তবে ইদানীং ড্রামাটিক আই মেকআপের চলও লক্ষ করা যাচ্ছে। নীল, ময়ূরকণ্ঠী, বেগুনি, সবুজ ইত্যাদি রঙ দিয়েই সাধারণত চোখের সাজে ড্রামাটিক লুক আনা হয়। কয়েকটি রঙের ব্যবহার সাজে নিয়ে আসবে আরও বৈচিত্র্য। ব্লাশনের ক্ষেত্রে পিচ, মভ, গোলাপি রঙ ব্যবহার করা যেতে পারে। ভারী মেকআপের ক্ষেত্রে বাদামি, মেরুন এই গাঢ় রঙগুলো বেছে নিতে পারেন। তবে মেকআপ ভারী হোক আর হালকা, যে রঙ বেছে নেবেন তা অবশ্যই ত্বকের সঙ্গে মানাতে হবে, এমনটাই মনে করেন তাঁরা। পোশাকে যেহেতু রঙের সমাহার থাকছে না, তাই সাজ দিয়েই উজ্জ্বলতা আনতে হবে। হয় চোখ নয়তো ঠোঁট, যেকোনো একটির ওপর আলোকপাত করতে হবে। চোখের মেকআপ ভারী হলে লিপস্টিকের রং হবে হালকা এবং গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করলে চোখের সাজ হবে একদম ন্যাচারাল। সাজে কোন কোন রং প্রাধান্য পাবে তা অনুষঙ্গের ওপরও অনেকটা নির্ভর করবে। সাদা পোশাকের সঙ্গে মুক্তা বা সাদা পাথরের গয়নাই সাধারণত বেশি পরা হয়ে থাকে, তবে এখন রঙিন পাথর বা পুঁতির গয়নাও হরদম পরতে দেখা যাচ্ছে। গয়না অথবা ব্যাগ রঙচঙে হলে তার রঙের সঙ্গে মিলিয়েও সাজ দেওয়া যেতে পারে। হাল ফ্যাশনের ট্রেন্ড অনুসরণ করলে সাদা বেশে সাদামাটাভাবে নয়, বরং নিজেকে উপস্থাপন করুন রঙিন সাজে।
লাইফস্টাইল মডেল:তাজরুবা নওশিন