ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজার পর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গড়া জরুরি
ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধোয়া, ভালো নাস্তা করা আর প্রাকৃতিক কর্ম সেরে কাজে বের হয়ে যাওয়া- এসব নিয়মিত কাজের মাঝেও আরও কিছু অভ্যাস গড়া প্রয়োজন।
কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে দিনের শুরুতে যেসব কাজ করা হয় সেগুলো ভালো ও সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।
সকালের রুটিনের সাথে সু্স্থ দীর্ঘ জীবনের সম্পর্ক
“প্রতি সকালে আমরা যা করি, তা আমাদের জানার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক চিকিৎসক জেফরি এগলার।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমাদের দেহঘড়ির ছন্দ ধরে রাখতে সকালের রুটিন গুরুতর ভূমিকা রাখে। যা দেহ পরিচালনার ক্ষেত্রে দরকারী। এর মধ্যে রয়েছে হরমোন তৈরি, বিপাক প্রক্রিয়া, ঘুম-জাগরণ চক্র।”
নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর সকালের অভ্যাসে দেহের এই কাজগুলো গতি বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
সঠিকভাবে আর্দ্রতা রক্ষা করা
সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পানের বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. এগলার বলেন, “ঘুম থেকে ওঠার পরপরই এক গ্লাস পানি পানের মাধ্যমে হজম স্বাস্থ্য, বিপাকক্রিয়াতে প্রভাব রাখার পাশাপাশি দেহের দুষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।”
আর এই অভ্যাস গড়ার জন্য রাতেই বিছানার পাশে এক গ্লাস পানি রাখার পরমর্শ দেন তিনি।
পুষ্টিকর নাস্তা করা
সারাদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হল সকালের নাস্তা।
“সকালের নাস্তায় থাকতে হবে পুষ্টিকর, আঁশ সমৃদ্ধ ও প্রোটিন যুক্ত খাবার” পরামর্শ দেন ডা. ফেডরিকা আমাটি।
মার্কিন এই পুষ্টিবিদ আরও বলেন, “সকালের নাস্তায় উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন টকদই বা ওটস দিয়ে ডিম, ফল, বাদাম ও বীজ ধর্মী খাবার খাওয়া উপকারী।”
দেহ টানটান করা
দিনের শুরুতে ইয়োগা, হাঁটা বা ‘স্ট্রেচিং’ করলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, দেহের নমনীয়তা বাড়ে আর বাইরের আলোর স্পর্শে দেহঘড়ি সঠিকভাবে চালিত হয়- জানান ডা. আমাটি।
সকালে দাঁত ব্রাশ করা ও নাস্তা করার মাঝে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট হালকা হলেও শারীরিক কসরত করার সময় বের করা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় করা
ঘুম থেকে ওঠার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় করা।
ডা. আমাটি বলেন, “দ্রুত তিন মিনিটের দৈহিক ব্যায়াম এক্ষেত্রে কার্যকর। সেটা হল হাত মুঠ পাঁকিয়ে দেহের নানান অংশের মৃদু আঘাত করা। দিনের শুরুতে এই অভ্যাস স্নায়ুতন্ত্র দ্রুত জাগিয়ে তোলে।”
এছাড়া যে কোনো ধরনের শারীরিক কসরত শরীরের ব্যথা চাপ কমাতেও কার্যকর।
মনোযোগ বাড়ানো
দেহ ঠিক মতো সক্রিয় করার মানসিক দিকে নজর দিতে হবে।
ডা. আমাটি পরামর্শ দেন, “জার্নাল লেখা, গভীর নিঃশ্বাস বা ধ্যান করা- দিনের শুরুতে এসবের অভ্যাস মানসিকভাবে চাঙা বোধ করায়। সারাদিনের চাপ সামলাতে সুবিধা হয়।”
সারাদিনের লক্ষ্য স্থির করা
সারাদিন কী করতে হবে সেটা জানা থাকার চাইতে বাস্তবায়নের পন্থা তৈরি করা বেশি কার্যকর।
তাই ডা. এগলার বলেন, “কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সারাদিনের লক্ষ্য পূরণের জন্য কী কী করতে হবে। মাথায় যদি নাও ধরে সব কিছু তবে লিখে ফেলতে হবে। তাহলে উদ্দেশ্য পূরণ স্বার্থক হবে বেশিরভাগ সময়।”
সকালে কফি উপভোগ করা
এই পানীয় শুধু জাগিয়ে তোলে না বরং অন্ত্রের জন্যও উপকারী।
ডা. আমাটি বলেন, “সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কফিপ্রেমীদের অন্ত্রে বিশেষ ধরনের মাইক্রোবায়োম থাকে যা ‘লসনিব্যাক্টর’ নামে পরিচিতি। এই ‘মাইক্রোব’ অন্ত্রের জন্য উপকারী। ক্যাফিন ছাড়াও কফির নানান উপাদান এই পরিবেশ অন্ত্রে গড়তে সাহায্য করে।”