ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের তুইলেরিস উদ্যানের পরিচ্ছন্ন নুড়িপাথরের পথ ধরে ঝলমলে রোদে হেঁটে যাচ্ছিলেন বারবারা ও রিক উইলসন দম্পতি। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহর থেকে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স সফরে এসেছেন তাঁরা। পর্যটক হিসেবে এলেও যেন নিজেদের পরিচয় একটু আড়াল করেই চলছিলেন।
৭৪ বছর বয়সী রিক উইলসন হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে নিজের বেসবল ক্যাপে থাকা তারকাখচিত, সাদা-কালো মার্কিন পতাকার চিহ্ন ঢেকে দেন ছোট্ট একটি কালো টেপ দিয়ে। তাঁর স্ত্রী বারবারার পকেটেও ছিল একটি কানাডীয় ল্যাপেল পিন—যা আরেকজন পর্যটক তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন। প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন, ভেবেছিলেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিকভাবে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণায় তাঁরা যেমন আতঙ্কিত, তেমনি লজ্জিতও। রিক বলেন, ‘বিষয়টি (শুল্ক) নিয়ে আমাদের খুব খারাপ লাগছে। এটা ভয়ানক, শুধু আতঙ্কেরই নয়, বিব্রতকরও।’
বারবারাও তাঁর হতাশা লুকাননি, ‘আমাদের দেশ নিয়ে আমি হতাশ। শুল্ক নিয়ে আমরা বিরক্ত।’
ল্যুভর জাদুঘরের সামনে পর্যটকদের ভিড়ের মধ্যেও দেখা গেল একই রকম মনোভাব। কথা হয় নিউইয়র্কের ৫৬ বছর বয়সী অ্যাটর্নি ক্রিস এপসের সঙ্গে। তিনি ফ্রান্স সফরে নিজেকে আলাদা রাখতেই নিউইয়র্ক ইয়াঙ্কি হ্যাট হোটেলেই রেখে এসেছেন। বললেন, ‘এই হ্যাট দেখলে মানুষ বুঝে ফেলতে পারে আমরা কোথা থেকে এসেছি।’
তবে ফরাসিদের আচরণে মার্কিন পর্যটকদের প্রতি বিদ্বেষ বা অসন্তোষের কোনো প্রকট লক্ষণ দেখা যায়নি। তবুও একধরনের অস্বস্তি যেন থেকে যাচ্ছে।
ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেল গাইড লে গাইড দু রুতার্দ–এর প্রতিষ্ঠাতা ফিলিপ গ্লোয়াগুয়েন জানান, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত তাঁর লেখা গাইড বইয়ের চাহিদা ২৫ শতাংশ কমেছে। ‘এটা একটা বড় পতন,’ বলেন তিনি।
গ্লোয়াগুয়েন আরও বলেন, ‘আমার পাঠকেরা শিক্ষিত, তরুণ, এবং গণতান্ত্রিক মনোভাবের। যখন কোনো দেশে স্বৈরতন্ত্র চলে, সেটা আমরা বুঝতে পারি। পুতিন বা চীনের মতো নেতাদের শাসনব্যবস্থা যেমন, অনেক ফরাসি এখন যুক্তরাষ্ট্রকেও সে দৃষ্টিতেই দেখতে শুরু করেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাব কেবল রাজনৈতিক অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং তা পর্যটন, শিক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও দৃশ্যত প্রভাব ফেলছে।