1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima

পানি লাগলেই শরীর চুলকায়, জ্বর আর ডায়রিয়া ঘরে ঘরে

  • আপডেট : বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
নোয়াখালীত হাসপাতালের মেঝেতেও চলছে ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা। আজ সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে

নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ব্যাপক এলাকায় এখনো বন্যার পানি রয়ে গেছে। খাল, নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সরতে পারছে না বন্যার পানি। দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি-কাশি, চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। কালো বর্ণ ধারণ করা পচা পানি গায়ে লাগলেই চুলকানি দেখা দিচ্ছে। দুই জেলার অনেক মানুষই এই পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে পায়ে ক্ষত, হাতে খোসপাঁচড়া দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি ঘরে ঘরে জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে।

নোয়াখালীতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড়

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল এবং জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। জেলা সিভিল সার্জন চিকিৎসক মাসুম ইফতেখার এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ২১২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া চুলকানিসহ পানিবাহিত চর্মরোগী বহির্বিভাগে আগের তুলনায় বেশি আসছেন। ওই সব রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হওয়ায় তাঁদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না।

নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেনারেল হাসপাতালে ১০৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই শিশু। আরএমও বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। পানিবাহিত চুলকানিসহ নানা চর্মরোগের চিকিৎসা বহির্বিভাগ থেকে দেওয়া হয়। বন্যার কারণে এসব রোগী অনেক বেড়ে গেছে

ঘরে ঘরে রোগী

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের সুলতান মাঝির বাড়ির সাকায়েত উল্যাহর তিন সন্তান সাথী আক্তার, নিহা আক্তার ও নিজু। তারা প্রত্যেকেই গত এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ। কারও জ্বর-সর্দি, কারও ঠান্ডাজনিত সমস্যা। এ ছাড়া ঘরের নারী-শিশুসহ প্রায় সবার চুলকানিসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রায় একই ধরনের সমস্যায় ভুগছে বাড়ির কমপক্ষে ১৫ জন শিশু। তাদের বয়স দেড় বছর থেকে সাত-আট বছর।

শুধু সেনবাগ উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের সুলতান মাঝির বাড়িতেই নয়, জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর সব বাড়িতেই জ্বর-সর্দি, পাতলা পায়খানা, চুলকানিসহ নানা চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বন্যার পানি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেওয়ায় এসব রোগব্যাধি আরও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্যার পানিনিষ্কাশনে জেলা প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি বলে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা মনে করেন।

বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার করিমপুর এলাকার সড়কে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনায় একাকার বন্যার পানি মাড়িয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন গৃহিণী সালমা আক্তার।  এই নারী বলেন, শুধু সড়কেই নয়, এখনো তাঁর বাড়িতে বন্যার  সরছে না। পানি জমে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার কারণে ঘরে ঢোকারও অবস্থা নেই। অনেক কষ্টে ঘর পরিষ্কার করলেও বাইরে পা ফেলতেই ময়লা পানি। পানি গায়ে লাগলেই চুকাচ্ছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চৌমুহনীর খালগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে ভরাট হয়ে গেছে। এতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি নামছেন না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে যত দূর সম্ভব খাল পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে এই দুর্যোগ থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পেতে হলে চৌমুহনী শহরের এবং আশপাশের খালগুলো খননে উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী খালকেও খননের আওতায় আনতে হবে।

লক্ষ্মীপুরের হাসপাতালের শয্যার চেয়ে ১০ গুণ রোগী

টেনেটুনে সংসার চলান পেয়ারা বেগম। স্বামী ভারসাম্যহীন রোগী। বন্যার পানির সঙ্গে থাকতে থাকতে পায়ে ঘা হয়েছে তাঁর। ১০ দিন ধরে জ্বর। কাশি তো লেগেই আছে। হাঁটাচলা দূরের কথা, এখন ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছেন না চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এ নারী। বাধ্য হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গত সোমবার। হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পেয়ারা বেগমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা টুমচর গ্রামে। তিনি জানান, দুই সপ্তাহ ধরে বাড়িতে কোমরপানি ছিল। এখনো পানি আছে, তবে অল্প। স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে সংসার। বাড়ির চারপাশে থই থই করছে। পানিতে হাঁটাচলার কারণেই তিনি ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হন।

শুধু পেয়ারা বেগম নন, লক্ষ্মীপুরের বন্যাকবলিত পাঁচটি উপজেলার হাজার হাজার পরিবার জ্বর, ডায়রিয়া, চর্মসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত। গতকাল মঙ্গলবার জ্বর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের ভিড় দেখা গেছে লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মোট শয্যা ১০টি। অথচ সন্ধ্যা পর্যন্ত ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি ছিল ১০৫ জন। এর মধ্যে শিশু ৭৬ ও নারী ১৯ জন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। শয্যা না পেয়ে রোগীদের জন্য মেঝেতে বিছানা পাতা হয়েছে। হাসপাতালে তথ্যমতে, এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া, জ্বর ও পানিবাহিত রোগে সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই সময়ের মধ্যে বহির্বিভাগ ও ভর্তি মিলিয়ে প্রায় এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা অরূপ পাল জানিয়েছেন, বন্যার পর এক সপ্তাহ ধরে লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের ৮০ ভাগই শিশু। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডায়রিয়া রোগীদের কেউ কেউ। অনেকে ঘরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। জেলার ৫৮টি মেডিকেল টিম সেবা দিচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন। পানিবন্দী থাকা অনেক মানুষ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া নবজাতক, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। তাই যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে তাঁদের অবিলম্বে চিকিৎসা দিতে হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া প্রথম আলোকে জানান, এখনো ২ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছেন ১৩ হাজার ৩৪ জন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর, চরশাহী, বাঙ্গাখা, চন্দ্রগঞ্জ, পার্বতীনগরসহ ২০-২৫টি ইউনিয়নে পানি রয়েছে। এসব এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme