1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman

অবশেষে দুদকের মামলা প্রত্যাহার: হেনস্তার দায় কে নেবে, প্রশ্ন খালিদীর

  • আপডেট : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

“হয়রানির অস্ত্র হিসেবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা করার যে সংস্কৃতি আমরা দেখে এসেছি, সেখান থেকে এবার দেশ বেরিয়ে আসুক,” বলেন তিনি।
পাঁচ বছর ধরে চলা ‘হয়রানির’ অবসান হল অবশেষে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে ‘অসাধু উপায়ে’ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিল দুর্নীতি দমন কমিশন।

ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আস সামছ জগলুল হোসেন বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে দুদকের আবেদনের শুননি করে তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির মৌখিক আদেশ দেন। রোববার বিচারক সেই লিখিত আদেশে সই করেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দুদক ও আদালতের এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী, সেই সঙ্গে ‘হেনস্তার’ জন্য করেছেন আক্ষেপ।
তিনি বলেছেন, “পুরোপুরি মিথ্যা, ভিত্তিহীন একটি অভিযোগ তুলে আমাকে, আমাদেরকে এতগুলো বছর অকারণে হেনস্তা করা হল, সামাজিকভাবে হেয় করা হল, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং ব্যবসায়িকভাবে গভীর এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে ফেলা হল, একটি সংবাদমাধ্যমের শ্বাসরোধের মত অবস্থা করা হল, এসবের দায় এখন কে নেবে?

“আগেও বলেছি, এ ধরনের মিথ্যা মামলা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে, অকার্যকর করে ফেলে। হয়রানির অস্ত্র হিসেবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা করার যে সংস্কৃতি আমরা দেখে এসেছি, সেখান থেকে এবার দেশ বেরিয়ে আসুক।”

কমিশনের বিশেষ পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বৃহস্পতিবার দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক স্বাক্ষরিত মামলা প্রত্যাহারের অনুমোদনপত্র আদালতে দাখিল করেন।

মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে বলা হয়, ক্রিমিনাল ‘ল’ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ১৯৫৮ এর ১০ (৪) ধারা ও ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৫ ধারার বিধানের আলোকে দুদক এ মামলার প্রসিকিউশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহারসহ তাদের কোনো সম্পদ ক্রোক, অবরুদ্ধে ও বিদেশ গমনের নিষেধাজ্ঞা থাকলে তার সকল দায় থেকে তাকে অব্যহতি দেওয়া প্রয়োজন।

বিচারক রোববার তার লিখিত আদেশে বলেন, তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল।

মামলা প্রত্যাহার হওয়ায় তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিদেশযাত্রায় আর বাধা নেই।

এছাড়া তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করা হয়েছিল, সেগুলোও অবমুক্ত করে দেওয়ার আদেশ দেন বিচারক।

কী অভিযোগ ছিল দুদকের?

২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, তাদের কোম্পানিতে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ। ওই বিনিয়োগের একটি বড় অংশ তারা ব্যয় করবে ডিজিটাল সংবাদ সেবার সম্প্রসারণ ও উদ্ভাবনে।

কিন্তু পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তাৎক্ষণিকভাবে ওই ‘বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম থেকে বিরত’ থাকার নির্দেশ দেয়।তার দুই সপ্তাহের মাথায় দুর্নীতি দমন কমিশন ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অবস্থান গোপনের’ অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে তৌফিক ইমরোজ খালিদী ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিরুদ্ধে ‘অনুসন্ধান’ শুরু করে।

দুদকের চিঠি পেয়ে ২৬ নভেম্বর কমিশনের কার্যালয়ে গিয়ে নিজের বক্তব্য জানিয়ে আসেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী। এরপর দুদকের আবেদনে খালিদী এবং বাংলাদেশ নিউজ টোয়েন্টিফোর আওয়ার্স লিমিটেডের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে আসা ওই বিনিয়োগের টাকা অবরুদ্ধ করা হয়।

বিনিয়োগের ওই টাকাই ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ অর্জন করা হয়েছে অভিযোগ করে ২০২০ সালের ৩০ জুলাই মামলা দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

এজাহারে বলা হয়, তৌফিক ইমরোজ খালিদী তার নামে থাকা কোম্পানির ২০ হাজার শেয়ার ২৫ কোটি টাকায় এবং কোম্পানির আরও ২০ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু করে ২৫ কোটি টাকায় এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করেছেন। ওই ৫০ কোটি টাকার মধ্যে ৪২ কোটি টাকা এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন হিসাবে জমা করা হয়েছে।

ওই টাকা যে শেয়ার বিক্রি থেকে এসেছে, সে কথা লেখার পরও দুদকের অভিযোগে বলা হয়, “তৌফিক ইমরোজ খালিদী উক্ত অস্থাবর সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করেছেন, যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”

এরপর কেটে যায় তিন বছর নয় মাস। তৌফিক ইমরোজ খালিদীর জামিন আটকাতে বার বার চেষ্টা করে দুদক, লাভ হয়নি। বরং তৌফিক ইমরোজ খালিদীর আবেদনে রুল জারি করে হাই কোর্ট। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না– তা জানতে চাওয়া হয় সেখানে।

সেই রুল নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানকে তার বর্তমান কর্মস্থল ময়মনসিংহ থেকে ডেকে এনে প্রতিবেদন দিতে বলে কমিশন। তিনি গত রোজার ঈদের আগে অভিযোগপত্র জমা দিলে ১৮ এপ্রিল কমিশন সভায় তা অনুমোদন করা হয়।

এজাহারের সঙ্গে মিল রেখে অভিযোগপত্রে বলা হয়, এইচএসবিসি, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মূল কোম্পানি এবং প্রধান সম্পাদকের বিভিন্ন হিসাবে ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬৭ টাকা ‘ফ্রিজ’ বা অবরুদ্ধ করে রাখা আছে, তার ‘বৈধ কোনো উৎস নেই’।

আইনি লড়াই

অনুসন্ধান, তলব এবং মামলার এজাহার- সবগুলো পর্যায়ে কমিশনের লিখিত ভাষা যেভাবে বার বার বদলে গেছে, তাকে এর আগে ‘দুদকের গোল পোস্ট বদলের নমুনা’ হিসেবে দেখিয়েছিলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদীর একজন আইনজীবী।

তার জামিন বাতিলের জন্য ২০২০ সালে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছিল দুদক, তা খারিজ করে দিয়ে আপিল বিভাগ কমিশনের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছিল, এসব আবেদন নিয়ে এসে কেন তিনি আপিল বিভাগের ‘সময় নষ্ট’ করছেন।

মামলাটিকে ‘অসার ও নিবর্তনমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে তা বাতিলের জন্য ২০২২ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে হাই কোর্টে একটি আবেদন করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।তার আবেদনে বলা হয়, দুদকের দায়ের করা ওই এজাহারে আইন অনুসারে ‘প্রাইমা-ফেসি’ বা প্রাথমিক সারবত্তা নেই। মামলাটি ‘অসার, গোলমেলে, নিপীড়নমূলক’। এটি চালিয়ে যাওয়া হবে আদালত ও আইনগত প্রক্রিয়ার অপব্যবহার। তাই ‘চূড়ান্ত ন্যায় বিচারের স্বার্থে’ এটির কার্যক্রম বাতিল চাওয়া হয়।আর্জিতে যুক্তি দেওয়া হয়, এফআইআরে বলা অভিযোগ যদি সত্য বলে ধরেও নেওয়া হয়, তাহলেও তা দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনে বিচার্য নয়।

এজাহারে অর্থের উৎস নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তা খণ্ডন করে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর আবেদনে বলা হয়েছে, স্বীকৃতভাবে শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ওই টাকা অর্জন করা হয়েছে। তাই বিক্রি করা শেয়ারের অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা শেয়ার ক্রয়কারীকে করা উচিত।

তাছাড়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের দপ্তর থেকে যথাযথভাবে নিবন্ধিত একটি বেসরকারি কোম্পানি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। সুতরাং শেয়ার বিক্রির জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে জানানোর বাধ্যবাধকতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রযোজ্য নয়।এরপর পৌনে দুই বছরে বেশ কয়েকবার এ মামলার তারিখ পড়ে। দুদকের পক্ষ থেকে বার বার সময় চেয়ে শুনানি পেছানো হয়। কয়েকটি তারিখে দুদকের আইনজীবী হাজির না থাকায় শুনানি করা যায়নি।

শেষ পর্যন্ত খালিদীর করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিন ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাই কোর্ট বেঞ্চ চলতি বছরের ২ জানুয়ারি রুলসহ আদেশ দেয়।দুদকের করা এ মামলা কেন বাতিল করা হবে না, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয় রুলে। দুদক চেয়ারম্যান এবং ঢাকার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এর মধ্যে সম্প্রতি কমিশন বৈঠকে তৌফিক ইমরোজ খালিদীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। তারা সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে আদালতে আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়ার আদেশ দিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme