রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা শেষে ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যাংকে জিম্মি দশার অবস্থান হলো। এর আগে রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করা হয়। এ সময় তারা ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে। পরে, যৌথ বাহিনীর তৎপরতায় তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ডাকাত দলে তিন সদস্যকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়। অবসান ঘটে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ডাকাতদের ব্যাংক থেকে আটক করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে থাকা র্যাব-১০ এর অধিনায়ক খলিলুর রহমান হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, আলোচনার মাধ্যমে ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে।
তিনি আরও জানান, তাদের কাছ থেকে তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ব্যাংকের ভেতরে থাকা জিম্মিদের মধ্যে কেউ হতাহত হননি। অর্থ লোপাটের ঘটনাও ঘটেনি। ডাকাতকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তিনটি দেশীয় অস্ত্র ছিলো।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আত্মসমর্পণে রাজি করানো হয়। ডাকাত দলের সদস্যরা জানালা দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করে।
একটি বন্দুক জানালা দিয়ে ফেলা হয়। বাকি অস্ত্র ব্যাগে ভরে বাইরে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। পরে একে একে ডাকাত দলের সদস্যরা বেড়িয়ে আসে। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন ডাকাত সদস্যকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
পরে র্যাবের পক্ষ থেকে এক বার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় রূপালী ব্যাংকে ঢুকে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা তিন ডাকাত তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা চিরকুটের মাধ্যমে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়েছিল। সেই মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তিন ডাকাত সদস্যেরই বয়স ১৮ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ডাকাত সদস্যদের বিস্তারিত পরিচয় জানানো হয়নি। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
র্যাবের ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর মোস্তাফিজ জানান, ব্যাংকে ডাকাতি করতে আসা তিনজন আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডাকাতরা ব্যাংকে ঢুকে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে ডাকাতির চেষ্টা করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। তাদের মধ্যে অস্ত্রসহ তিনজন আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের বয়স আনুমানিক ২০-৩০ বছর।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাজহারুল ইসলাম বলেন, অস্ত্রসহ তিনজন যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। পরে তাদের কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাদের হাতে হাতে চাকুসহ অস্ত্র ছিলো। তবে অস্ত্রগুলো খেলনার কি না, সেটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এর আগে, বেলা দুইটার দিকে ডাকাতদল রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় হানা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ব্যাংকটি ঘিরে ফেলে। ডাকাত দলের সদস্যরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের জিম্মি করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন, ব্যাংকের ভেতরে দুই থেকে তিনজন ডাকাত প্রবেশ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ডাকাত দলের সদস্যদের আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানায়। ওই সময়ে ব্যাংকটিতে আট-দশজন সাতজন কর্মকর্তা ছিলেন।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, চুনকুটিয়া এলাকায় রূপালী ব্যাংকে ডাকাত প্রবেশ করলে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে ব্যাংকে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে যান। ডাকাতদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
ডাকাতদলের হানা দেয়ার খবরে ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক নেমে আসে। ব্যাংকে ডাকাত দলের হানা দেয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ব্যাংকের পাশের একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে ডাকাত আসার কথা জানানো হয়। এতে ব্যাংকটির সামনে ভিড় করেন স্থানীয় জনতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ব্যাংক ভবনের ভেতরে ছয়-সাতজন ডাকাতের একটি দল প্রবেশ করে। পরে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ উপস্থিত সবাইকে ডাকাতদল জিম্মি করে। হঠাৎ ব্যাংক এলাকা থেকে চিৎকার শুনে আমরা দৌড়ে আসি। এ সময় খবর পেয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালান।
তারা আরও জানান, ডাকাত দল সব সদস্যদের হাতে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। ডাকাত দল ব্যাংকে প্রবেশের সময় ভেতরে ১৫ থেকে ২০ জন গ্রাহক থাকতে পারেন বলে তাদের ধারণা। তারা বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তা যখন মধ্যাহ্নের আহার নিতে ব্যস্ত ছিলেন, ঠিক সেই সময়ে ডাকাত দল প্রবেশ করে।
এ প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুপুর ২টার দিকে ডাকাতরা ওই ব্যাংকের দ্বিতীয় তলায় ঢুকে পড়ে। তারা যখন সিঁড়ি দিয়ে ব্যাংকে ঢোকে, তখন নিচে অন্যান্য লোকজন ও ব্যবসায়ীরা বিষয়টি টের পেয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও লোকজন ব্যাংকের প্রবেশ ও বের হওয়ার একমাত্র সিঁড়ির মুখে থাকা কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেন। এরপরই ব্যাংকের ভেতরে থাকা ডাকাতরা সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে তখনই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে ব্যাংকটি ঘিরে ফেলেন। পরে, অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। তখন ব্যাংকের ভেতরে কর্মকর্তাসহ ১০ থেকে ১২ জন স্টাফ জিম্মি হয়ে পড়েন।
রূপালী ব্যাংকে ওই শাখার ম্যানেজার শেখর মন্ডল জানান, ঘটনার সময় তিনি ব্যাংকের বাইরে ছিলেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন এবং ডাকাত দলের সঙ্গে বনিবনা শুরু করেন। ব্যাংকের ভেতরে বেশ কয়েকজন দশ জনের মতো কর্মকর্তা রয়েছে। ডাকাত দল নিরাপদ প্রস্থান ও ১৫ লাখ টাকা দাবি করে।