ঈদের আগে ও পরে ছয় দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মিলনায়তনে আয়োজিত সভায় তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদুল ফিতরের পর বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনার কারণে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি আমাকে বিব্রত করেছে। এর জন্য সরাসরি দায়ী না হলেও মন্ত্রী হিসাবে তাকে সমালোচনা মোকাবিলা করতে হবে। ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি। তিনি আরও বলেন- দেশ এগিয়ে গেলেও বাস মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গি নিচে নেমে গেছে।
মন্ত্রী বলেন, ঈদের দিন এবং আগে-পরে ছয় দিন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্ট সামগ্রী, ওষুধ, সার ও জ্বালানি বহনকারী যানবাহন চলবে। সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো ঈদের দিন এবং আগের সাত দিন ও পরের পাঁচ দিন সব সময় খোলা থাকবে। তবে নো হেলমেট নো ফুয়েল নির্দেশনা মানতে হবে।
এ ছাড়া যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে পোশাক কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে ছুটি ঘোষণা করার আহ্বানও জানান। তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। যাত্রী হয়রানি বন্ধে বিভিন্ন টার্মিনালে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থাকবে ও টিম কাজ করবে। সড়কে সব অবৈধ, অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হবে। পরিবহণ সংকট নিরসনে বিআরটিসির (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশন) স্পেশাল সার্ভিস দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি রাখতে হবে।
সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সভায় ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত রাখতে ঢাকার প্রবেশপথসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বাড়তি নজরদারি ও গাড়ি সরবরাহ পর্যাপ্ত রাখতে বলা হয়েছে। ঈদের পরে নজরদারি কমে যাওয়ায় সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সড়কে তদারকি বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, হেলপার যেন ড্রাইভার না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। হেলপার ড্রাইভার হলে তো দুর্ঘটনা হবেই। যানজট বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ৩০ থেকে ৪০ মিনিটে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে হানিফ ফ্লাইওভারে দেড়-দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। গাড়ির চাপে স্থবির হয়ে থাকে হানিফ ফ্লাইওভার। নিচের দিকের কিছু কারণে এই সমস্যাটা। জাতীয় স্বার্থেই এ সমস্যার সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া দিতে গিয়ে অনেক সাধারণ যাত্রীর কাছে টাকা থাকে না। জনগণের স্বার্থে বাস মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধে কঠোরভাবে মনিটরং করার অনুরোধ করছি। বিআরটিসি’ও এই কাজটা করে। এবার বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে পশুবাহী গাড়ি ও পশুরহাট নিয়ে।
তিনি আরও জানান,‘ঈদযাত্রায় বিশেষ করে সমস্যা দেখা দেয় গার্মেন্টের ছুটির দিনে। বিশেষত গাজীপুরের চন্দ্রায়, হাজারো মানুষ রাস্তায় হাঁটতে থাকে। গাড়ি প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে। সেখানে বিআরটিসির গাড়ি রাখতে হবে। শ্রমিকদের বাড়ি যাওয়ার একটা অস্থিরতা থাকে। সেটা সামাল দিতে হবে প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করে।
মন্ত্রী বলেন, রঙের চেয়ে ফিটনেসের প্রতি বেশ মনোযোগী হতে হবে। জীর্ণশীর্ণ চেহারার কতগুলো গাড়ি প্রতিদিনই দেখি তাকানো যায় না। দেশ এত এগিয়ে গেল আর বাস মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গি এত নিচে নেমে গেল! পরিস্থিতির তেমন উন্নয়ন হয়নি, সড়কে এত পরিদর্শন করার পরও।