মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, সরব জামায়াত ও জাতীয় পার্টি
নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন একাধিক নেতা। তারা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গণসংযোগে সক্রিয় হয়েছেন। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে, যা শিবচরের রাজনৈতিক মাঠে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে এবং নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু করেছে। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
এক সময় **শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই নূর-ই-আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী)**র একচ্ছত্র প্রভাব ছিল শিবচরে। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে অন্য কোনো দল দাঁড়াতেই পারত না। তবে ক্ষমতার পালাবদলে দৃশ্যপট বদলেছে—লিটন চৌধুরী এখন পালাতক, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ, অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন।
এই সুযোগে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতারা মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
১. কামাল জামান নূরুদ্দিন মোল্লা – শিবচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক
২. নাবিলা চৌধুরী
৩. সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী – জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক
4. ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান – উপজেলার সাবেক সভাপতি
এই চার নেতা শিবচরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়ে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরছেন, কেউ কেউ সরাসরি ভোটও চাইছেন। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা গ্রুপ বিভাজনে জড়িয়েছেন, এবং সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।
উপজেলা আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী।
তিনি ও তার কর্মীরা গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও সমাবেশ শুরু করেছেন।
তারা ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করে ভোটারদের কাছে ‘একবার জামায়াতকে সুযোগ দেওয়ার’ আহ্বান জানাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিন্টু সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সভা-সমাবেশ, অনুষ্ঠান ও ব্যক্তিগত সংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
🔹 নাবিলা চৌধুরী বলেন,
“আমি দলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। নেতাকর্মীরা ও হাইকমান্ড তা জানে। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।”
🔹 সাজ্জাদ হোসেন লাভলু বলেন,
“এখানে বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দলের অবস্থান নেই। দুর্দিনে কাদের অবদান ছিল, দল নিশ্চয়ই তা বিবেচনা করবে।”
🔹 কামাল জামান নূরুদ্দিন বলেন,
“১৬ বছর এলাকায় আসতে পারিনি। আশা করি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।”
🔹 মাওলানা সরোয়ার হোসেন (জামায়াত) বলেন,
“ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করেছি। বৈঠক-সমাবেশে জনগণকে বলছি, জামায়াতকে একবার সুযোগ দিন।”
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী জাহান বলেন,
“বিএনপি একটি বড় দল। একাধিক নেতা মনোনয়ন চাইতেই পারেন। তবে মনোনয়ন একজনই পাবেন। এতে সমস্যা নেই।”
চলমান বিভক্তি, জামায়াতের সক্রিয়তা ও জাতীয় পার্টির মাঠজুড়ে উপস্থিতি—সব মিলিয়ে মাদারীপুর-১ আসনে একটি ত্রিমুখী নির্বাচনি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।