1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : Shahriar Rahman : Shahriar Rahman
  3. [email protected] : Jannatul Naima : Jannatul Naima

সাইপ্রাসে কেন হামলার হুমকি দিচ্ছে হিজবুল্লাহ

  • আপডেট : শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪

প্রতিবেশী দেশ সাইপ্রাসে হামলার হুমকি দিয়েছেন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসারাল্লাহ। গত সপ্তাহে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হতে পারে ইসরায়েলের। এই যুদ্ধে সাইপ্রাস যদি ইসরায়েলকে সাহায্য করে, তাহলে ভূমধ্যসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটিতে হামলা চালাবে হিজবুল্লাহ।

হাসান নাসারাল্লাহ বলেন, সাইপ্রাস যদি ইসরায়েলি বাহিনীকে নিজেদের বিমানবন্দর ও বিমানঘাঁটিগুলো ব্যবহার করতে দেয়, তাহলে সাইপ্রাসও এই যুদ্ধের অংশ হয়ে যাবে। লেবাননের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ আসন্ন—ইসরায়েলের এমন হুমকির এক দিন পর সাইপ্রাসে হামলা নিয়ে পাল্টা এ হুমকি দেন ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত হিজবুল্লাহর প্রধান।

হিজবুল্লাহ সাইপ্রাসে হামলার হুমকি দেওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, ‘সাইপ্রাস ইইউর সদস্য। ইইউ মানে সাইপ্রাস আর সাইপ্রাস মানে ইইউ।’ ইউরোপের ২৭ দেশের এই জোটের মুখপাত্র পিটার স্টানো সাংবাদিকদের বলেন, ‘সদস্যরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো হুমকি ইইউকে হুমকি দেওয়ারই নামান্তর।’

হিজবুল্লাহ প্রধানের হুমকির পর সাইপ্রাসের প্রতিবেশী দেশ গ্রিসও এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এথেন্স বলেছে, সাইপ্রাসে হামলার হুমকি জাতিসংঘ সনদের চরম লঙ্ঘন। গ্রিস সাইপ্রাসের পাশে আছে।

হাসান নাসারাল্লাহর হুমকির পর শুরু টানাপোড়েন সামলানোর চেষ্টা হিসেবে সাইপ্রাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্টানটিনোস কম্বোসের সঙ্গে কথা বলেছেন লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দাল্লাহ বোউ হাবিব।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ হয়তো সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াবে না। তবে সাইপ্রাসকে আলোচনায় নিয়ে আসায় গাজা যুদ্ধের নতুন একটি দিক সামনে এসেছে। তাঁদের মতে, গাজা যুদ্ধ ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। এখন সাইপ্রাসকে এতে টেনে আনায় ইইউর একটি সদস্যদেশের এই যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলের সঙ্গে সাইপ্রাসের মৈত্রীর বিষয়টিও সামনে এসেছে।

সাইপ্রাসের অবস্থান যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থান সাইপ্রাসের। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ ইউরোপের মধ্যবর্তী জায়গায় হওয়ায় ভূরাজনৈতিক দিক থেকে সাইপ্রাসের অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেও ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সাইপ্রাস।

সাইপ্রাসের আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের দ্বিগুণ। দ্বীপরাষ্ট্রটির রয়েছে দুটি অংশ। গ্রিকভাষী অধ্যুষিত দক্ষিণ অংশের নাম রিপাবলিক অব সাইপ্রাস এবং তুর্কি ভাষাভাষী অধ্যুষিত অপর অংশের নাম টার্কিস রিপাবলিক অব নর্দার্ন সাইপ্রাস। এই বিভাজন আঞ্চলিক দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে দ্বৈরথের প্রতিফলন। বেশির ভাগ দেশ শুধু গ্রিক ভাষাভাষী সাইপ্রাস অংশকেই সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই অংশেই হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসারাল্লাহ।

রিপাবলিক অব সাইপ্রাসের জনসংখ্যা ৯ লাখের বেশি। রাজধানী নিকোশিয়া। ইইউর সদস্য হলেও রিপাবলিক অব সাইপ্রাস পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য নয়। ন্যাটো জোটের মূলনীতি হলো কোনো সদস্যদেশে আক্রমণ হলে সব দেশ এক হয়ে সেই দেশকে রক্ষায় বাধ্য থাকবে।

সাইপ্রাস ইসরায়েলের কতটা ঘনিষ্ঠ

ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬০ সালে সাইপ্রাস ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। কিন্তু ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেল আবিবে সাইপ্রাসের দূতাবাস ছিল না। তুরস্কের সঙ্গে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং আরব-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে গত শতকের আশি ও নব্বইয়ের দশকে সাইপ্রাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছিল। তখন সাইপ্রাস আরব দেশগুলোর পক্ষ নিয়েছিল। একই সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল সাইপ্রাসের সমর্থন।

তবে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এবং চলতি শতকের প্রথম দশকে সাইপ্রাস ও ইসরায়েলের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়। এই সময় ইসরায়েল ভূমধ্যসাগরে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বাড়াতে শুরু করে। বিশেষ করে অঞ্চলটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের খনির সন্ধান পাওয়ার পর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঞ্চলিক হুমকি বিশেষ করে তুরস্ক ও ইরান–সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর হুমকি মোকাবিলায় সাইপ্রাসকে অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে থাকে ইসরায়েল।

হিজবুল্লাহর সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সাইপ্রাসের ভূখণ্ড ব্যবহার করছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতে, লেবাননের ভৌগোলিক কাঠামোর সঙ্গে সাইপ্রাসের মিল রয়েছে। এ কারণে সাইপ্রাসে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে লেবাননে যুদ্ধ করার কৌশল শেখানোর লক্ষ্যেই সেখানে ইসরায়েলের সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

২০২২ সালে সাইপ্রাসের সঙ্গে একটি যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছিল ইসরায়েল। এরপর সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে সাইপ্রাস ও ইসরায়েল সামরিক মহড়া চালিয়েছে।

এই সংঘাতে কতটা জড়াবে সাইপ্রাস

সাইপ্রাসকে এর আগেও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক সংঘাতের মধ্যে পড়তে হয়েছে। ফলে অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে যেকোনো সময় সাইপ্রাসের জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। ২০১৯ সালে সাইপ্রাসের উত্তরাঞ্চলে রাশিয়ার তৈরি একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হয়েছিল। সাইপ্রাসের কর্মকর্তারা তখন জানিয়েছিলেন, ওই ক্ষেপণাস্ত্র সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের অংশ ছিল বলে ধারণা তাঁদের।

ইরানের একজন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মোহাম্মদ আলী শাবানি বলেন, নিজেদের সামরিক বাহিনীর জন্য ইসরায়েল সাইপ্রাসের যেসব ঘাঁটি ব্যবহার করে, সেগুলো নিশানা করে হামলার হুমকি দিয়েছে হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ যদি সাইপ্রাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান নিশানা করে হামলা চালায়, তাহলে গাজা যুদ্ধের বিস্তার ঘটবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত। এতে দ্রুত বিস্তার ঘটতে থাকা গাজা যুদ্ধে প্রথমবারের মতো জড়িয়ে পড়বে ইইউ জোটের কোনো সদস্যদেশ।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, ইসরায়েল ও হামাসের চলমান সংঘাত একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, কোনো পক্ষই আদতে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াতে চায় না।

লন্ডনভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির সহযোগী ফেলো লিনা খাতিব বলেন, যেকোনো সময় সংঘাতের আকার বাড়তে পারে। তাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখাটা ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর জন্য স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েল বা হিজবুল্লাহ কোনো পক্ষই সর্বাত্মক যুদ্ধ থেকে লাভবান হবে না। হিজবুল্লাহ জানে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে সেটা লেবাননের জন্য হবে বিপর্যয়কর। এ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়াক, এর পক্ষে দেশটিতে জনসমর্থনও নেই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটেগরীর আরো খবর
© 2024  All rights reserved by Desheralo.com
Customized BY NewsTheme