বিজ্ঞানীরা বলছেন, পোকামাকড়ের বার্গার আর ল্যাবে তৈরি মাংস খুব শিগগির আমাদের খাবারের থালায় চলে আসবে। গবাদিপশুর বিকল্প হিসেবে পোকামাকড় ও ল্যাবে তৈরি মাংস নিয়ে যুক্তরাজ্যে কাজ করছেন একদল বিজ্ঞানী। ব্রিটিশ খাদ্যের ধরন বদলাতে তৈরি করা হয়েছে একটি সরকারি গবেষণা কেন্দ্র। ১ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড অর্থায়নে কাজ করছে ন্যাশনাল অল্টারনেটিভ প্রোটিন ইনোভেশন সেন্টার। বিভিন্ন সুপারমার্কেটে শিগগিরই গবাদিপশুর মাংসের বিভিন্ন বিকল্প আসবে এই কেন্দ্র থেকে। আমাদের গ্রহের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় এক–পঞ্চমাংশ দায়ী গবাদিপশু। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির হিসাবে বলা হয়, ২০৫০ সালে পশুর মাংসের চাহিদা দ্বিগুণ হবে। আমাদের খাদ্য উৎপাদনে কার্বন কমানোর জন্য কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।যুক্তরাজ্যের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ার বিজ্ঞানী অ্যান ফার্গুসন-স্মিথ বলেন, যুক্তরাজ্যে বিকল্প প্রোটিনশিল্প নিয়ে কাজ চলছে। বিকল্প মাংস তৈরির জন্য বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের বিকল্প প্রোটিন পণ্য ও প্রযুক্তি তৈরির জন্য বিশ্বব্যাপী চাহিদা বাড়ছে। বিশ্বের শতাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানি, বেসরকারি সংস্থা বিকল্প প্রোটিন তৈরির জন্য ২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছে। পশুর প্রোটিন উৎসের সম্পূর্ণ বিকল্প প্রোটিন সাপ্লাইচেইন গড়ে তুলতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন ও ল্যাবে উত্পাদিত মাংস নিয়ে কাজ চলছে। প্রোটিনসমৃদ্ধ শেওলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিকল্প উপায় নিয়ে জোরেশোরে গবেষণা চলছে।
যুক্তরাজ্যের লিডস স্কুল অব ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী আনেশা সরকার বলেন, বিকল্প প্রোটিন ব্যবহারের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাধারণ মানুষের সামনে বিকল্প প্রোটিনের সুযোগ তৈরি করা ও গ্রহণযোগ্যতা বর্তমানে একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। বাজার তৈরির পাশাপাশি স্বাদ ও পুষ্টির সমতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উদ্বেগ ও কৃষকদের জীবিকা বন্ধের ভয় আছে।
যুক্তরাজ্যের রিসার্চ ও ইনোভেশন সেন্টারের বিজ্ঞানী অধ্যাপক গাই পপি বলেন, কোন ধরনের পোকানির্ভর প্রোটিন ক্রেতারা কিনবেন, তার সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে হবে। সংস্কৃতিগতভাবে যুক্তরাজ্যে ক্রেতারা চিংড়ি খেলে খুশি হন, সেখানে পোকায় সমস্যা হবে না। প্রক্রিয়াকরণের ওপর নির্ভর করে কোনো পোকাকে এমন কিছুতে পরিণত করতে হবে যা মানুষ খেতে ইচ্ছুক হবে। পোকার প্রোটিন থেকে বিস্কুট বা বার্গার তৈরি করা যেতে পারে। ফুড ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার গবেষণায় দেখা যায়, পশুর মাংসের তুলনায় নকল মাংসের পণ্য বেশি পুষ্টিকর। সেগুলো ভালোভাবে কাজ করে। এসব খাবারে সাধারণত কম ক্যালরি, কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও বেশি ফাইবার থাকে।
এখন মটরশুঁটিসহ অনেক নতুন শস্য বিকল্প পণ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যদিও বিকল্প প্রোটিনশিল্প নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে গ্রহণযোগ্য হলেও অনেক দেশে ল্যাবে তৈরি খাবার নিয়ে চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। গত বছর ইতালি কৃষিনির্ভর খাদ্য ঐতিহ্য রক্ষার জন্য ল্যাবে উত্পাদিত মাংস নিষিদ্ধ করে। হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশে ল্যাবে তৈরি খাবার নিয়ে মামলার কথা শোনা গেছে। ইউরোপে প্রথম দেশ হিসেবে এ বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্য পোষা প্রাণীর খাবার হিসেবে ল্যাবে তৈরি মাংসের অনুমোদন দেয়। সিঙ্গাপুর, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাবে তৈরি কৃত্রিম মাংস বিক্রির অনুমোদন রয়েছে। সারা বিশ্বে বিকল্প মাংস ও প্রোটিনশিল্পের আকার বাড়ছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই বছরে এই বাজারের আকার ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন পাউন্ড। ২০৩৫ সালে যুক্তরাজ্যে এই শিল্পে ২৫ হাজার কর্মীর চাহিদা থাকবে।