রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে শান্তি এবছরও ছিল অধরা; ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে লেবানন থেকে ইরান এমনকি ইয়েমেন সংঘাতে রূপ নিয়েছে।সময়ের পরিক্রমায় মানব সভ্যতার বয়সে যুক্ত হল আরেকটি বছর। মানব সভ্যতার বয়স বাড়লেও মানবিক সভ্যতার বয়স বেড়েছে কি না, সেই প্রশ্ন নিয়েই শেষ হচ্ছে ২০২৪ সাল।বিভিন্ন ঘটনার ঘনঘটা থাকলেও বছরটিকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল যুদ্ধ। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে উত্তেজনা বেড়ে ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এ অঞ্চলে চারটি যুদ্ধে এবছর লিপ্ত থেকেছে ইসরায়েল।গাজায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে গিয়ে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ থেকে ইসরায়েল-ইরান এমনকি ইসরায়েল-ইয়েমেন সংঘাতের রূপ নিয়েছে। সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের ঝড়ো আক্রমণের মুখে পতন হয়েছে বাশার আল-আসাদের দীর্ঘদিনের শাসনের। গণ অভ্যুত্থানে বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে।মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেছে। দু’বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেইনের যুদ্ধে এবছরও অধরা থেকেছে শান্তির আশা।সংঘাতের এই বাড়-বাড়ন্তের মধ্যেও এবছর নির্বাচনী ডামাডোল ছিল বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবার বিপুল জয় নিয়ে ফের নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ টোরি শাসনের অবসানে ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টির সরকার।অনেকগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবছরও সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। মক্কায় হজ চলাকালে তীব্র উত্তাপে বহু মানুষের মৃত্যুও উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে সামনে এসেছে।
গাজা যুদ্ধ
আগের বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নজিরবিহীন হামলার জেরে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ ২০২৪ এর পুরোটা জুড়ে চলেছে। নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির শুরুর দিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল প্রায় ২৩০০০, কিন্তু জুলাইয়ের শেষ দিকে এ সংখ্যাটি ৪০০০০ ছুঁই ছুঁই ছিল। আর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের শেষ দিকে তা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। জাতিসংঘের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক আর তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু।২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যুদ্ধের পঞ্চম মাসে রাফায় স্থল অভিযানের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার এই অভিযান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই উদ্বাস্তুতে পরিণত হন আর পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে প্রায় দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ বছরে ইসরায়েল হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দেইফ, সালেহ আল- আরৌরি, মারওয়ান ঈসাসহ অধিকাংশ শীর্ষ নেতাকে হত্যা করে।
নতুন বছরের শুরুতেই ২ জানুয়ারির বৈরুতে হামাসের ডেপুটি নেতা সালেহ আল-আরৌরিকে হত্যা করে ইসরায়েল। আরৌরিকে ইসরায়েল হওয়া ৭ অক্টোবর হামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২৬ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের সামরিক শাখার ডেপুটি কমান্ডার মারওয়ান ঈসাকে হত্যা করার কথা জানায়। যার নাম ইসরায়েলের ‘মোস্ট ওয়ানটেড’ তালিকায় ছিল। ১৩ জুলাই খান ইউনিস শহরে হামাসের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফকে লক্ষ্যস্থল করে তীব্র বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুযায়ী, এ হামলায় দেইফ প্রায় ৯০ জন ফিলিস্তিনিসহ নিহত হন। ৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে এক গুপ্ত হামলায় ইসমাইল হানিয়া নিহত হন। তিনি নির্বাসনে কাতারের রাজধানী দোহায় বসবাস করতেন এবং সেখান থেকে হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তিনি গুপ্ত হামলার শিকার হন। এ হামলার জন্য ইরান ও হামাস ইসরায়েলকে দায়ী করলেও দেশটি এ ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি। হানিয়া নিহত হওয়ার পর ৬ অগাস্ট গাজা ভূখণ্ডের হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামাসের শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হন।
কিন্তু সিনোয়ারও আর বেশিদিন জীবিত থাকতে পারেননি। ১৬ অক্টোবর রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে এক লড়াইয়ে হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনোয়ার নিহত হন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামাসের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা সিনোয়ারই করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় এবং কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় সারা বছর ধরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চললেও কোনো ফল হয়নি। ইসরায়েল ও হামাসের নিজ অবস্থান ও দাবিতে অনড় থাকাই এর কারণ। ইসরায়েল হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ও গাজার ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার বিষয়ে অনড় অবস্থান নিয়ে থাকে, অপরদিকে হামাস যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করা ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবিতে অটল থাকে।
১০ জুন জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে ইসরায়েল ও হামাস, উভয়কে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে। এরপর ২১ নভেম্বর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি)। পাশাপাশি নিহত বলে দাবি করা হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফের (ইব্রাহিম আল মাসরি) বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
লেবাননে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধ
গাজা যুদ্ধে হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রায় এক বছর ধরে (২০২৩ এর ৮ অক্টোবর থেকে) ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রকেটে, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরকবাহী ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছিল ইরান সমর্থিত লেবাননি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলেও পাল্টা গোলা ছুড়ে ও বিমান হামলা চালিয়ে জবাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু চলতি বছরের ২৭ জুলাই ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে রকেট হামলায় ১২ শিশু ও কিশোর নিহত হওয়ার পর এই পাল্টাপাল্টি সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার দিকে মোড় নেয়।
গোলান মালভূমিতে হামলার ঘটনায় হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে ইসরায়েল। এর জের ধরে ৩০ জুলাই ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর ঊর্ধ্বতন কমান্ডার ফুয়াদ শোকর নিহত হন। গোলানে হামলার জন্য শোকরকে দায়ী করেছিল ইসরায়েল।
শোকর হত্যার প্রতিশোধ নিতে অগাস্টের শেষ দিকে ইসরায়েলে তিনশরও বেশি রকেট ও ড্রোন যোগে হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে হিজবুল্লাহ, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে এর আগে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল।
এর মাধ্যমে কমান্ডার শোকর হত্যার প্রতিশোধমূলক আক্রমণের ‘প্রথম পর্যায়’ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় হিজবুল্লাহ। ফুয়াদ হত্যার পূর্ণ জবাব দিতে ‘আরও কিছু সময়’ লাগতে পারে বলে জানায় তারা।
এরপর থেকেই হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যাপক মাত্রার সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ইসরায়েল। তারা দক্ষিণে গাজা থেকে কয়েক ডিভিশন সেনা সরিয়ে এনে উত্তরে লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করতে শুরু করে।
কিন্তু হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হয় ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীটির সদস্যদের ব্যবহার করা পেজার বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। ১৭ সেপ্টেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুত ও দেশটির আরও বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে এসব বিস্ফোরণ ঘটে।
এতে এক শিশুসহ অন্তত ১২ জন নিহত ও আরও ২৭৫০ জন আহত হন। হতাহতদের অধিকাংশ হিজবুল্লাহর যোদ্ধা। লেবাননের একাধিক জায়গায় অনির্দিষ্ট সংখ্যক পেজার বিস্ফোরিত হয়। এতে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোনের পরিবর্তে পেজারের ওপর নির্ভরশীল হিজবুল্লাহর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক অনেকটা অকার্যকর হয়ে যায়।
এর পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত ওয়াকিটকিগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন নিহত ও আরও ৬০৮ জন আহত হন। এই গুপ্ত হামলার মাধ্যমে হিজবুল্লাহর যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রায় পঙ্গু করে ফেলে ইসরায়েল।
এদিন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট বলেন, যুদ্ধ নতুন পর্যায়ে যাচ্ছে এবং আরও সম্পদ ও সামরিক ইউনিট এখন উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে মোতায়েন করা হচ্ছে। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী বৈরুতসহ লেবাননজুড়ে ব্যাপক ও তীব্র বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
কয়েকদিন ধরে লেবাননের বিভিন্ন স্থানে তাদের লাগাতার হামলায় হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র কোরের নেতা ইব্রাহিম কুবাইসি, ড্রোন ইউনিটের নেতা মোহাম্মদ সরুর, ইব্রাহিম আকিলসহ বহু নেতা ও যোদ্ধা নিহত হন। এই ধারবাহিকতায় ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টার লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় তারা।
হিজবুল্লাহর নেতা সৈয়দ হাসান নাসরাল্লহকে লক্ষ্যস্থলে পরিণত করতে এসব হামলা চালানো হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর রাত থেকে শুরু করে ২৮ সেপ্টেম্বরের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় হিজবুল্লাহর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলীতে বিমান হামলার ঢেউ বইয়ে দেয় ইসরায়েল।
২৮ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল দাবি করে, হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর ওই দিনই হিজবুল্লাহ তাদের প্রধান নেতা হাসান নাসরাল্লাহর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে। নাসরাল্লাহর পাশাপাশি একই হামলায় হিজবুল্লাহর আরেক শীর্ষ নেতা আলি কারাকিও নিহত হন। টানা ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন অবকাঠামো ও নেতৃবৃন্দকে ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল। এই পুরো সময়জুড়ে ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র
ও ড্রোন হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। এরপর ১ অক্টোবর থেকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি ছত্রীবাহিনী, কমান্ডো ও সাঁজোয়া ইউনিটগুলো অভিযান চালানোর মধ্য দিয়ে লেবাননে স্থল আক্রমণ শুরু করে।
২৩ অক্টোবর হাসান নাসরাল্লাহ উত্তরসূরি হিসাবে বিবেচিত হিজবুল্লাহর নেতা হাসেম সাফিয়েদ্দিন ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন। পরে হিজবুল্লাহর সহকারী মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসা শেখ নাইম কাসেমকে শীর্ষ নেতা নির্বাচন করে গোষ্ঠীটি।
প্রায় দুই মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলার পর ২৬ নভেম্বর ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও লেবানন একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। ২৭ নভেম্বর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ইসরায়েল জানায়, এ যুদ্ধে তাদের ৫৬ জন সেনা নিহত হয়েছে এবং তারা হিজবুল্লাহর সাড়ে তিন হাজার যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। অপরদিকে, লেবানন সরকার জানায়, ইসরায়েল লেবাননে ২৭২০ জনকে হত্যা করেছে যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত
গাজা যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যে উত্তেজনা তৈরি করেছিল তা হিজবুল্লাহ-ইসরায়েলের যুদ্ধে রূপ নেওয়ার এক পর্যায়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায় আঞ্চলিক শক্তি ইরান। ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলায় দেশটির সামরিক বাহিনীর দুই ব্রিগেডিয়ারসহ ১৬ কর্মকর্তা নিহত হন।
নিহতদের মধ্যে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের শীর্ষ কয়েকজন কমান্ডার ছিলেন। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রত্যয় জানায় ইরান। প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতের দিকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান।
ইসরায়েলে হামলা চালাতে ইরান প্রায় ১৭০টি ড্রোন, ৩০টিরও বেশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ১২০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী পদ্ধতি ব্যবহার করে এগিয়ে আসতে থাকা বহু অস্ত্র ধ্বংস করে। মার্কিন, ব্রিটিশ ও জর্ডানের বিমান বাহিনীও গুলি করে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে। এই জোট ইরানের ছোড়া ৯৯ শতাংশ অস্ত্র ইসরায়েলি আকাশসীমায় প্রবেশ করার আগেই ধ্বংস করেছে বলে দাবি করে ইসরায়েল।
এটি ছিল আঞ্চলিক শত্রু ইসরায়েলে ইরানের প্রথম সরাসরি হামলা। পাশাপাশি এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলাও ছিল।
এ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ১৯ এপ্রিল ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের ইসফাহান শহরের কাছে সামরিক কমপ্লেক্সকে লক্ষ্যস্থল করা হয়। এখানে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের কিছু স্থাপনাও আছে। তবে ইরান দাবি করে, তারা হামলা প্রতিহত করেছে এবং এতে তেমন বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
৩১ জুলাই ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া ইসরায়েলের এক গুপ্ত হামলায় নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলে সরাসরি হামলার নির্দেশ দেন। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে তীব্র বিমান হামলা চালিয়ে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ হত্যাকাণ্ড ইরানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
১ অক্টোবর সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নির্দেশে ইসরায়েলে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে জেরুজালেম, তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল কেঁপে উঠে। ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী-আইআরজিসি জানায়, ইসরায়েলে তারা প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক শ্রেণির ‘ফাতাহ’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হেনেছে। আইআরজিসি স্পষ্ট করে জানায়, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার আব্বাস নিলফোরুশানের শাহাদাদের বদলা নিতে ইসরায়েলে এই হামলা চালানো হয়েছে।
হামলার সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলের প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষেপণাস্ত্র নিরোধী বাঙ্কারগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ছুটে যান। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি দেশটির টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ইরান ‘মারাত্মক আঘাত’ হেনেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, ইরান যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তার বেশিরভাগই ক্ষেপণাস্ত্রবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে আকাশেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তবে এসব হামলায় ইসরায়েলি ঘাঁটিগুলোর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও দেশটির কর্তৃপক্ষ সেসব ছবি প্রকাশ করেনি।
কয়েক মাস ধরে ইরান যেসব হামলা চালিয়েছে তার জবাবে ২৬ অক্টোবর ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে ইসরায়েল। তেহরান, খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশের ঘাঁটি এ হামলার শিকার হয় বলে জানায় ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী।
ইয়েমেন-ইসরায়েল সংঘাত
বছরের শেষ দিকে এসে ইয়েমেনে বড় ধরনের হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৯ জন মারা যায়। ইয়েমেনের ‘সামরিক স্থাপনায়’ এ হামলা হয়। এর মধ্যে ছিল রাজধানী সানা, বন্দর ও জ্বালানি অবকাঠামো। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করে ইসরায়েল।
ওদিকে, হুতি গোষ্ঠী এর আগে জানিয়েছিল, তারা ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলীয় শহর জাফার একটি সামরিক লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এই নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তারা ইসরায়েল লক্ষ্য করে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে বলে ধারণা হয়।
ইরানের সমর্থন পাওয়া ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলের দিকে বারবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আসছে। গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা এসব হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি হুতিদের।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নভেম্বর থেকে ইয়েমেন উপকূল সংলগ্ন লোহিত সাগর, এডেন উপসাগর আরব সাগরে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী জাহাজগুলোতে হামলা চালাচ্ছে হুতিরা। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলি জাহাজ বা তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোতে হামলা চালাচ্ছে তারা।
এবছর ডিসেম্বরে ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও বন্দর শহর হোদেইদাহসহ হুতিদের বেশ কয়েকটি লক্ষ্যস্থলে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলার দুই দিন পরই হুতিরা ফের ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল এবং ইয়েমেনের মধ্যে এমন সংঘাত বাড়ছে।
বাশার আল আসাদের পতন
বিশ্বকে চমকে দিয়ে বছরের শেষ দিকে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা মাত্র ১২ দিনের এক বিদ্যুৎগতির আক্রমণে রাজধানী দামেস্ক দখল করে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতন ঘটায়। এর মাধ্যমে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের অর্ধ শতাব্দীর এবং বার্থ পার্টির ৬১ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। বাশার আল-আসাদ ছেড়ে পালিয়ে মস্কো চলে যান, সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পান তিনি।
১৩ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলার পর সিরিয়ার বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট আসাদকে পরাজিত করার মতো সুযোগ পায়। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ ও সংঘাতে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইরানের দুর্বল হয়ে পড়ার সুযোগে বিদ্রোহীরা আক্রমণ শানায়। বিদ্রোহীদের জোট ছয় মাস আগেই তাদের পরিকল্পনা নিয়ে
তুরস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং মৌন সমর্থন পেয়েছে বলে বুঝতে পারে। এই জোটের নেতৃত্বে থাকা প্রধান উপদল হায়াত তাহরির আল-শামকে (এইচটিএস) তুরস্ক জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করলেও অন্য উপদল সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) আঙ্কারার সমর্থনপুষ্ট।
২৭ নভেম্বর লেবাননে যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হওয়ার দিনটিতেই সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দ্রুতবেগে তাদের আক্রমণ শুরু করে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই তারা সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখল করে নেয়। হিজবুল্লাহ, ইরান ও রাশিয়ার সামরিক সমর্থনে বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলেন। তারপর ২০২০ সাল থেকে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ স্তিমিত হয়েছিল।
সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে ছোট একটি অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো কোণঠাসা হয়েছিল। সেখানে থেকে এসে এতো দ্রুতগতিতে প্রায় বিনা বাধায় বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল নিয়ে নেওয়ায় সবাই বিস্মিত হয়ে যায়। কিন্তু এখানেই না থেমে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তারা হামা শহর দখল করে নেয়।
এরপর ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শহর হোমসের দখল নেওয়ার পর ৮ ডিসেম্বর সরকারি বাহিনী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ হারায়। বিদ্রোহীদের এই অগ্রযাত্রা সব ধরনের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যায়। এরপর সিরিয়ার বিরোধীদলগুলো দেশ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী সরকার হিসেবে অন্তবর্তী সরকার গঠন করে। আসাদের এতো দ্রুত পতনের কারণ হিসেবে তার সেনাবাহিনীর মনোবল হারানো ও অবসন্ন হয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে সেনাবাহিনীর ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান চালানোর মতো কোনো জ্বালানি ছিল না বলে জানা গেছে। বিদ্রোহীরা দ্রুত এগিয়ে এলেও এসব যুদ্ধাস্ত্র যেখানেরটা সেখানেই পড়ে ছিল। দুর্বল হয়ে যাওয়া সশস্ত্র বাহিনী কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি। পাশাপাশি আসাদের প্রধান মিত্র ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতে ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে তারা আসাদকে তেমন সহায়তা করতে সক্ষম হয়নি।
আসাদের অপর প্রধান সমর্থক রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সিরিয়ায় মনোযোগ দিতে পারেনি আর তারা আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছিল। আসাদ যখন সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় আছেন তখনই বিদ্রোহীরা আঘাত হানে। আর বিদ্রোহীদের এই সাহসী পরিকল্পনাটি এইচটিএস ও এর নেতা আহমেদ আল-শারারের (যিনি আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি নামেই বেশি পরিচিত)।
আসাদ পরিবারের পতন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাবের জন্য এক বড় ধাক্কা। ইসরায়েলের হাতে হাসান নাসরাল্লাহ খুন ও হিজবুল্লাহ দুর্বল হওয়ার মধ্য দিয়ে ইরানের প্রভাবে ক্ষুণ্ন হতে শুরু করার পর দ্রুতই আসাদের পতন হয়।
মাটি হারাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা
মিয়ানমারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা চলছে।
সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ জান্তা সরকার রক্তপাতের মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার পর এর বিরোধীরা অস্ত্র তুলে নিয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। মিয়ানমারে বিভিন্ন দিক থেকে জান্তাবিরোধী একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী গণতন্ত্রপন্থি সরকারের সমর্থনে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই বিদ্রোহীদের কাছে অনেক শহর ও সামরিক ফাঁড়ি খুইয়েছে জান্তা।
আগে থেকেই চলমান জাতিগত বিদ্রোহীদের পাশাপাশি গণতন্ত্রপন্থিদের জান্তাবিরোধী লড়াই দেশটিতে পূর্ণমাত্রায় গৃহযুদ্ধের সূচনা করে। ২০২৪ এর প্রথমদিকে চীন সীমান্ত এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়াান্সের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় জান্তা। মধ্যস্থতা করেছিল চীন।
চীনা কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় চীনের কুনমিং শহরে দু’পক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। চীন প্রকাশ্যে দেশটির মিন অং হ্লাইং সরকারের সমালোচনা না করলেও সীমান্ত বরাবর মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ধরে রাখতে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রেখে চলছে।
এর মধ্যে জানুয়ারির প্রথমদিকে শান রাজ্যের চীন সীমান্তের নিকটবর্তী শহর লাউক্কাই দখল করে নেয় থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) । এখানে জান্তার প্রায় আড়াই হাজার সেনা আত্মসমর্পণ করে।
ফেব্রুয়ারিতে জান্তা সরকার দেশটির ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সব পুরুষ ও ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী সব নারীকে সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সামরিক সরকারের এ সিদ্ধান্ত তরুণ বয়সীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে। এদের অনেকেই দেশ ছাড়ার চেষ্টায় পাসপোর্ট অফিস ও দূতাবাসগুলোতে ভিড় করেন। আর অন্যরা প্রতিরোধ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়।
এপ্রিলে কয়েক সপ্তাহের তুমুল লড়াইয়ের থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের মায়াওয়াদ্দি শহরের দখল নেয় দেশটির জান্তা শাসনবিরোধী বিদ্রোহী জোট। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটিতে বার্ষিক এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক বাণিজ্য হয়। পরে জান্তা সেনাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে শহরটি থেকে নিজেদের যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) ।
জুনে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলে বোমাবর্ষণ করে জান্তা চীনের মধ্যস্থতায় আয়োজিত যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙেছে অভিযোগ করে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্য ও মান্দালয়ে দ্বিতীয় পর্বের অভিযান শুরু করে।
আগস্টে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অন্যতম অংশ আরাকান আর্মি (এএ) শান রাজ্যের বৃহত্তম শহর লাশিওর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানকার আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের পতন ঘটায়। এটি মিয়ানমারের ইতিহাসে প্রথম কোনো আঞ্চলিক সামরিক কমান্ড পতনের ঘটনা ছিল।
সেপ্টেম্বরে যুদ্ধরত সামরিক বাহিনী প্রতিরোধ বাহিনীকে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দেয়। রাজনৈতিক সমস্যা ‘রাজনৈতিকভাবে সমাধানের’ আহ্বান জানায় জান্তা। কিন্তু বিরোধীদলগুলোর ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) ও জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীগুলো এমন চুক্তি করতে হলে জান্তাকে তাদের নৃশংসতার জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা ও রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার শর্ত দিলে প্রস্তাব ভেস্তে যায়।
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর দখলের দাবি জানায় আরাকান আর্মি (এএ) । লাশিওর পর এটি মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর দ্বিতীয় আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের পতনের ঘটনা।
বছরের শেষ দিকে এসে মিয়ানমারের জান্তা সরকার সব যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবল চাপের মুখোমুখি হয়। তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করেছে বলে ধারণা পাওয়া যেতে থাকে। দেশজুড়ে চলমান মানবিক সংকট থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির মুখে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে বলে গুজব শোনা
যায়। দেশের উত্তর, উত্তরপূর্বাঞ্চল ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ক্রমাগত জান্তার হাতছাড়া হতে থাকে। হাতছাড়া হয়ে যাওয়া এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারে জান্তা বাহিনী পাল্টা হামলা চালালেও তেমন সুবিধা করতে পারেনি।
ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পিঁছু হটে দেশটির কেন্দ্রীয় শহরগুলোর ঘাঁটিতে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। এই শহরগুলোর মধ্যে ইয়াঙ্গুন ও নেপিদোও আছে। এর ফলে এমন হতে পারে সামরিক বাহিনী এক সময়ের বৃহত্তর অঞ্চলগুলোর টুকরো অবশিষ্টাংশের মধ্যে শুধু নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবে আর দেশের বাকি অংশ বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ভাগ হয়ে থাকবে।
ইউক্রেইন যুদ্ধ
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেইন যুদ্ধ ২০২৪ এ দ্বিতীয় বছর পার করে তৃতীয় বছরে পড়ে। বছরজুড়ে চলা এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো ইউক্রেইনকে অবিরাম আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে নিতে সহায়তা করে। অপরদিকে রাশিয়াকে ইরান সামরিক ড্রোন সরবারহ অব্যাহত রাখে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অবরোধের মধ্যেও চীনের সমর্থনে রাশিয়া তাদের অত্যাধুনিক যুদ্ধোপকরণের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়।
বছরের শেষ দিকে ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার সেনা পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় কিইভকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানার জন্য ওয়াশিংটনের দেওয়া অনুমতিতে যুদ্ধের তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
২০২৩ এর ডিসেম্বর থেকে মে, ২০২৪-র মধ্যে রাশিয়া তাদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বৃদ্ধি করে, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কম প্রতিরোধযোগ্য অস্ত্র ছুড়তে শুরু করে। এর তুলনায় ইউক্রেইনীয় বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদের ঘাটতি ছিল। রাশিয়ার এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে ইউক্রেইনের সেরা ব্যবস্থা ছিল মার্কিন ক্ষেপাণাস্ত্র বিধ্বংসী পদ্ধতি প্যাট্রিয়ট। কিন্তু তাদের কাছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল না।
২০২৪ এর ১১ অগাস্টে ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনী রাশিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে দেশটির কুর্স্ক অঞ্চলে আক্রমণ করে। ইউক্রেইনের পক্ষের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েকদিনের মধ্যে তারা ৩৫০ বর্গকিলোমিটারের মতো এলাকা দখল করে নেয়। ১৯ অগাস্টের মধ্যে তারা কুস্র্ক থেকে রাশিয়ার কয়েকশ সেনাকে বন্দি করে। অক্টোবরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উত্তর কোরিয়া রাশিয়ায় সেনা পাঠিয়েছে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোর প্রধান জানান, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের কুর্স্ক অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া, উভয়েই গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে জানায়, কুর্স্ক অঞ্চলে উত্তর কোরীয় সেনারা ইউক্রেইনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে।
এরমধ্যে ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হন। নির্বাচনী প্রচারণাকালে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি জয়ী হলে আলোচনার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন বলে জানান।
ট্রাম্পের উদ্যোগে ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে এমন ধারণা যখন জোরদার হচ্ছে তখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কিইভকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানার অনুমতি দেন। ওয়াশিংটনের বড় ধরনের নীতির এই পরিবর্তনে ইউক্রেইন যুদ্ধ আরও তীব্র হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিশ্লেষকরা। রাশিয়ার নীতি নির্ধারকরা সতর্ক করে বলেন, ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ বিশ্ব যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে পরিবর্তনের হাওয়া
যুক্তরাজ্যের ৪ জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। এতে দেশটিতে টানা ১৪ বছর ধরে চলা টোরি শাসনের অবসান হয়। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন অন্তত ৩২৬টি।
সেখানে ৪১০টি আসন জিতে নিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে মধ্য বামপন্থি দল লেবার পার্টি সরকার গঠন করে। ভোটের প্রচারে পরিবর্তনের ডাক দেওয়া ৬১ বছর বয়সি স্টারমার বিপুল বিজয়ের পর ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যুক্তরাজ্যে ‘পরিবর্তনের সূচনা’ হল। ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীলদের যে ভরাডুবি হতে চলেছে, তা অনুমিতই ছিল।
৬৩৮টি আসনের ঘোষিত ফলাফলে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টি পায় মাত্র ১১৭টি। অর্থাৎ প্রায় আড়াইশ আসন তারা হারায়।
ওদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশ ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফলে কট্টর ডানপন্থিদের হতাশ করে জয় পায় বামপন্থিরা।
এর আগে জুনের প্রথমদিকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফ্রান্সে ডানপন্থিদের জয়ের পর হতাশ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ দেশে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের ডাক দেন। ইইউ-য়ের নির্বাচনে ডানপন্থিদের জোয়ারে মাক্রোঁর মধ্যপন্থি দল খারাপ ফল করায় তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর জন্যও একটি ধাক্কা হয়ে আসে, কারণ মাক্রোঁর মধ্যপন্থি এনসেম্বল জোট নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। সবাইকে অবাক করে শীর্ষস্থান দখল করে বামপন্থি জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি), তবে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কট্টর ডানপন্থি ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) তৃতীয় হয়।
এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের পার্লামেন্ট তিনটি বড় জোট- বামপন্থি, মধ্যপন্থি ও ডানপন্থির মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের প্রত্যেকেরই পুরোপুরি পৃথক ধরনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং কোনো ক্ষেত্রেই একমত হওয়ার কোনো ঐতিহ্য নেই। নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
ঝুলন্ত পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ম্যাক্রোঁর নিয়োগ করার তিন মাসের মাথায় প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ের সরকারের পতন হয়। কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা অবসানের চেষ্টায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মধ্যপন্থি নেতা ফ্রাঁসোয়া বায়রুর নাম ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ।
ফ্রান্সের আইন অনুযায়ী, অন্তত এক বছরের জন্য কোনও নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজন করা যাবে না। মাক্রোঁ তার প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মাঝামাঝি সময় পার করছেন। তার নিয়োগ করা বায়রু হয়েছেন এবছরের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা এখন কেবল দেশের নাগরিকদের জন্যই গভীর উদ্বেগের নয় বরং ইউরোপের জন্যও একইরকম উদ্বেগের।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইইউ-তে ফ্রান্সের ভূমিকা দুর্বল হয়ে ওঠার আশঙ্কা আছে। ফ্রান্সই কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধে বিভক্ত ও লক্ষ্যচ্যুত নয়। জার্মানিতেও জোট সরকারের পতন হওয়ার জেরে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
দুই দেশে এই অস্থিরতা জোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) প্রভাবিত করছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রসারণবাদী ও আগ্রাসী ক্রেমলিনের সামনে নিজেদের শক্তি এবং ঐক্য বজায় রাখার সংকল্প ইউরোপ দেখাতে পারবে কিনা প্রশ্ন সেটি।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন
হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার চার বছর পর ফের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে একে সবচেয়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন বলছেন কেউ কেউ। এখন থেকে আট বছর আগে (২০১৬) যেবার প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, বিশ্বের খুব কম লোকই তখন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পরিবর্তে তাকে নিয়ে বাজি ধরেছিল। কিন্তু ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্পের’ বছর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই সময়ে ট্রাম্প ভূমিকম্পের মতোই নতুন যুগের সূচনা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
কিন্তু ২০২০ সালে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলেও প্রত্যাখ্যানের নিদারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হওয়ার পর নির্বাচনের ফল মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। এরপর নির্বাচনের ফল পাল্টে হোয়াইট হাউজে থেকে যাওয়ার চেষ্টায় এমন সব ঘটনা ঘটিয়েছিলেন যেগুলো নিয়ে আজও তদন্ত চলছে।
কেলেঙ্কারির তার শেষ নেই, আদালতের বিচারে তিনি ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী, বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে কান পাতলেই তার নিন্দা শোনা যায়। প্রথমবার নির্বাচনে জিতে হোয়াইট হাউসে উঠলেও সেই চার বছর গেছে ‘বিশৃঙ্খলা আর সমালোচনার’ মধ্যে; নিজ দলের ভেতরেই অনেকে তার প্রতি হারিয়েছিলেন আস্থা।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন ক্যাপিটলে ঘটা প্রাণঘাতী হামলা উসকে দিয়েছিলেন, এমন অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা চিহ্নিত হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কুখ্যাত এক অধ্যায় হিসেবে। মনে হচ্ছিল, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হয়ত সেখানেই শেষ হয়ে গেল। অচ্ছুত মানুষ হিসেবে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়েছিলেন তিনি।
কিন্তু চার বছর পর বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তনে আবারও ভোটের মঞ্চে আবির্ভূত হন তিনি। আবারও হোয়াইট হাউজের দখল নিতে মরিয়া লড়াইয়ে নামেন। অতীত ইতিহাস তাকে হোয়াইট হাউজের দৌড়ে কতটুকু সামনে এগোতে দেবে, তা নিয়ে ছিল সংশয়। সেই সংশয় দূরে ঠেলে দিয়ে, দুই দফায় আততায়ীর বুলেট এড়িয়ে ফের হোয়াইট হাইজের চাবি হাতে পেয়ে যান তিনি। কোনো কিছুই তার জয় আটকাতে পারেনি। এবার সবদিক থেকেই পরিপূর্ণ জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। ২০১৬ সালে ইলেকটোরাল কলেজে জয় পেলেও পপুলার ভোটে হেরেছিলেন, এবার ইলেকটোরাল-পপুলার উভয় ক্ষেত্রে এগিয়ে থেকেই জয় পেয়েছেন। ৭৮ বছর বয়সেও তার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার দারুণ প্রমাণ রেখেছেন।
এই প্রত্যাবর্তন স্বপ্নের মতো হলেও কলঙ্ক তার পিছু ছাড়েনি। গুরুতর অপরাধের দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়ে আরেক ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছেন তিনি।
পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় গাজা, লেবানন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান বহুমুখী যুদ্ধে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রে এ রক্ষণশীল প্রেসিডেন্টের একচেটিয়া সমর্থন পাবে, এতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। আবার ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপকে এড়িয়ে কিইভকে পাত্তা না দিয়ে তিনি মস্কোর সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা চালাতে পারেন বলে মনে করেন কেউ কেউ।
দক্ষিণ এশিয়ায় পরিবর্তনের হাওয়া
বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ব্যাপক গণরোষের কারণে ভীত প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশ ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর আট শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।
৫ জুন হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর পরদিন আদালতের রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করলেও ১ জুলাই, সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের সূচনা হয়।
পরিস্থিতি পাল্টে যায় ১৪ জুলাই। সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ‘রাজাকার’ বিষয়ক এক মন্তব্য নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তার এই মন্তব্যের প্রতিবাদে রাতেই শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়।
পরদিন ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগসহ সরকার সমর্থকরা। এর প্রতিবাদে ১৬ জুলাই সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের তরফে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কখনো ৮ দফা, কখনো ৯ দফা দাবি জানানো হয়।
ঘটনার পরম্পরায় ৩ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি জানানো হয়। ৫ অগাস্ট বেলা ১১টার পর থেকে লাখো জনতা ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরই মধ্যে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
এভাবে প্রবল গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ৮ অগাস্ট নোবেল পুরস্কার জয়ী মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত সাত দফায় ভারতের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে লোকসভায় ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২টির চেয়ে বেশি আসন (২৯৩টি) পেলেও মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আর আগের দুইবারের মতো (২০১৪, ২০১৯) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, এবার তারা পায় ২৪০টি আসন।
এ নির্বাচনে কংগ্রেস পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ার পুনরুত্থান ঘটে, তারা জয়ী হয় ২৩৪টি আসনে। ভারতের মণিপুর রাজ্যে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে বছরজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করে আর বিভিন্ন সংঘর্ষে বহু মানুষের মৃত্যু হয়।
৩০ জানুয়ারি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস করার দায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ইমরানের নেতৃত্বাধীন নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) সদস্যরা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পান। কিন্তু দল নিষিদ্ধ থাকায় তারা সরকার গঠন করতে পারেননি।
সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগের মধ্যেই পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এর নওয়াজ শরীফ জয় দাবি করেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি পিএমএল-এন, পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং মিত্র অন্য দলগুলো মিলে জোট সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। শাহবাজ শরীফ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। মার্চে আসিফ আলি জারদারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
তারপর থেকে তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পাকিস্তানের রাজনীতিকে অস্থির করে রাখে। এর পাশাপাশি দেশটির বেলুচিস্তান প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলা, খাইবার পাখতুনখওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলা বছর জুড়ে দেশটিকে অস্থির করে রাখে।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনায় প্রতিবেশীদের সঙ্গেও দেশটির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। জানুয়ারিতে বেলুচিস্তানে কথিত সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর জবাবে দুই দিন পর পাকিস্তানও ইরানের সিস্তান বেলুচিস্তান প্রদেশে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কথিত ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়।
পাকিস্তানের আরেক প্রতিবেশী তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে বছরজুড়ে কয়েকবার প্রাণঘাতী হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে।
এ বছরের আরেক উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক হওয়া বদলের ঘটনা ঘটে শ্রীলঙ্কায়। ইতিহাস সৃষ্টি করে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন বামপন্থি প্রার্থী অনুরা কুমারা দিশানায়েকে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই দিশানায়েকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকের ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) বিশাল জয় পায়। দেশটির ৯৩ আসনের পার্লামেন্টে পিএনসির প্রার্থীরা দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে জয়ী হয়।
নির্বাচনের এই ফল ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটিকে দীর্ঘ দিনের মিত্র ভারত থেকে দূরে সরিয়ে চীনের আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
দুর্যোগের দুনিয়া
বছরের প্রথম দিনেই জাপানের পশ্চিম উপকূলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার এক ভূমিকম্প হয়। এতে অন্তত ৪৬২ জন নিহত ও ১৩৪৪ জন আহত হন। এর পরদিন দেশটির কোস্ট গার্ডের একটি বিমান বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা
জাপান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজকে ধাক্কা দিলে উভয় আকাশযানই আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যায়, এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন। উড়োজাহাজটির ৩৭৯ জন যাত্রীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।
এপ্রিলে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে অস্বাভাবিক ভারি বৃষ্টিপাতে হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু হয়। এতে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ডুবে গিয়ে ফ্লাইট চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে।
ব্রাজিলের রিও গ্রান্দে দো সুলে ব্যাপক বন্যায় বহু মানুষের মৃত্যু ও কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। পাপুয়া নিউ গিনিতে বড় ধরনের এক ভূমিধসে ১৬০ থেকে ২০০০ মানুষের মৃত্যু হয়। ভূমিধসে বহু মানুষ চাপা পড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা।
জুলাইয়ে ইথিওপিয়ায় এক ভূমিধসে ২৫৭ জনের মৃত্যু হয়। একই মাসের ৩০ জুলাই ভারতের কেরালা রাজ্যে ব্যাপক ভূমিধসের আরেক ঘটনায় অন্তত ৩৩৪ জনের মৃত্যু ও ২৮১ জন নিখোঁজ হন। আহত হন আরও ২০০ জন।
সেপ্টেম্বরে টাইফুন ইয়াগির তাণ্ডব ও এর প্রভাবে সৃষ্টি বন্যায় ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়।
একই মাসে ভারি বৃষ্টিতে ইউরোপের মধ্যাঞ্চলে ২০১০ সালের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়।
এ মাসের শেষ দিকে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে উঠে আসা হারিকেন হেলেনের তাণ্ডবে যুক্তরাষ্ট্রে ২৩৬ জনের মৃত্যু হয় এবং ৬৮৫ জন নিখোঁজ হন।
নভেম্বরে পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে আট ঘণ্টার মধ্যে এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টিপাতের পর দেখা দেওয়া আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক বিপর্যয় ঘটে, ব্যাপক ধ্বংসলীলার মধ্যে মৃত্যু হয় ২০০ জনেরও বেশি মানুষের।
সৌদি আরবের মক্কায় হজ চলাকালে এবছর তীব্র গরমে অন্তত ৫৫০ জন হজ যাত্রীর মৃত্যু হয়। যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে ৩২৩ জন মিশরীয় নাগরিক। হজের সময় বিপর্যয়কর বিভিন্ন ঘটনায় বহু মানুষ মারা যাওয়ার ইতিহাস আছে।
এর মধ্যে ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে ও তাঁবুতে আগুন লাগার মতো ঘটনাও আছে।
কিন্তু অধিকাংশ সময় তীব্র তাপমাত্রাই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এবারের হজ শুরু হয়েছিল ১৪ জুন।যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে একটি কনটেইনারবাহী জাহাজের ধাক্কায় প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজের বড় একটি অংশ ধসে পড়ে। এতে ছয়জনের মৃত্যু হয়।
অবশেষে মুক্তি
মার্কিন ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ আইন লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করে নেওয়ার চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে আপস রফায় পৌঁছানোর পর ২৩ জুন যুক্তরাজ্যের একটি উচ্চ নিরাপত্তার কারাগার থেকে মুক্তি পান উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।
এর মাধ্যমে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ বহু বছর পর মুক্ত জীবনে ফেরেন। ৫ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের বেলমার্শ কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। এর আগে আরও ৭ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ইকুয়েডরের দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছিলেন পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দেওয়া অ্যাসাঞ্জ।